দরিদ্র শীতার্থদের জন্য যুব সংগঠনের শীতবস্ত্র বিতরণ
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
‘আপনার দেওয়া একটি কম্বল হতে পারে প্রবীণদের শীত নিবারণের শেষ সম্বল’-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের আশিুজিয়া ‘হৃদয়ে কেন্দুয়া যুব সংগঠন’র উদ্যোগে ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ১২০০ জন প্রবীণ, ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তি, এতিম ও অসহায় ব্যক্তিদের মধ্যে একটি করে মোট ১২০০টি শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হয়। সংগঠনের সদস্যরা নিজেরা এবং এলাকার স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নিকট থেকে ২৯,০০০ (ঊনত্রিশ হাজার) টাকা সাহায্য সংগ্রহ করে সম্প্রতি এলাকার দরিদ্র ও অসহায় প্রবীণ ও এতিম শিশুদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। আশুজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে যুবদের সাথে শীতবস্ত্রগুলো বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আশুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজারুল ইসলাম, নোয়াদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কাদির এবং এলাকার মান্যবর মো. মতিউর রহমান।
এই প্রসঙ্গে সংগঠনের অন্যতম সংগঠন রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সমাজে আমরা একা বসবাস করতে পারিনা। সকলের সমন্বয়ে, সহযোগিতায়, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা না থাকলে বহুত্ববাদী সমাজের কথা আমরা চিন্তা করতে পারিনা। কারণ আমরা প্রকৃতির ও সমাজের সকলের কাছে পরস্পর নির্ভরশীল। সমাজের সকলের সাথে আমাদের কোনো না কোনো সম্পর্ক রয়েছে। আমরা মানবজাতি কোনোভাবেই একাকী বেঁচে থাকতে পারবো না। বিপদে-আপদে, সুখ-দুঃখে পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোই সামাজিকতা। হৃদয়ে কেন্দুয়া যুব সংগঠনের সকল সদস্যদের উদ্যোগে এলাকার দরিদ্র ও অসহায় প্রবীণ, প্রতিবন্ধি, এতিম ও অসহায় মানুষের শীত নিবারণে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমরা আমাদের সংগঠনের সদস্যদের সামর্থ্য অনুযায়ী এ ধরণের প্রয়াস সর্বদা অব্যাহত রাখব।’
হৃদয়ে কেন্দুয়া যুব সংগঠনের সদস্যরা অসহায় প্রবীণ, প্রতিবন্ধী, এতিম, দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিদের শীত নিবারণে শীতবস্ত্র সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করলো যুব সমাজ ইচ্ছে করলেই অনেক অসম্ভবকে সহজেই সম্ভব করতে সক্ষম। হৃদয়ে কেন্দুয়া যুব সংগঠনের ন্যায় সকল এলাকার যুবরা সংগঠিত হয়ে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও অসংগতি দূরীকরণে এবং সমাজের দরিদ্র অসহায়, প্রবীণ, ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তি, এতিম, বিধবাসহ সকল অসহায় জনগোষ্ঠীর সেবায় এগিয়ে আসলে আমাদের সমাজ একদিন শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও স্বনির্ভর সমাজে পরিণত হবে। পারস্পারিক সহযোগিতা, নির্ভরশীলতা ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনের মাধ্যমে আমাদের সমাজ বহুত্ববাদী সমাজে পূর্ণতা পাবে।
এলাকাভিত্তিক উদ্যোগী যুবদের গড়ে তোলা একটি স্বেচ্ছসেবী সংগঠন নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা আশুজিয়া ইউনিয়নের আশুজিয়া গ্রামের ‘হৃদয়ে কেন্দুয়া যুব সংগঠন”। সংগঠনের অধিকাংশ সদস্যই শিক্ষার্থী ও কিছু সংখ্যক সদস্য চাকুরীজীবী। লেখাপড়া ও চাকুরীর পাশাপাশি তারা এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও অসংগতি দূরীকরণে কিছু করার তাড়না থেকেই সংগঠনটি গড়ে তোলে। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ে সংগঠনটি এলাকার পরিবেশ উন্নয়নে ৩০০০টি বৃক্ষ রোপণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ সহায়তা, গ্রামের ছেলে-মেয়েদেরকে বিভিন্ন আসক্তি ও সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখতে গ্রামীণ সংস্কৃতি চর্চা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীর পাশে চিকিৎসা সেবা ও খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও এলাকার সেচ সমস্যা ও বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দূরীকরণে উপজেলার সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে সেচ পাম্প ও গভীর নলকূপ স্থাপন, বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলের অনুপযোগি গ্রামের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের (চেয়ারম্যান ও মেম্বার) সহযোগিতায় গ্রামের সকল শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করে। করোনাকালীন সংকটে সংগঠনটি ইউনিয়নের প্রায় ১০০০ প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা ও বয়সের মানুষের তিনদিনব্যাপী স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও স্বাস্থ্য সেবা পেতে সহায়তা করছে।
সকল পেশার মানুষকে নিয়েই আমাদের সমাজ। সকলের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও শ্রম ঘামেই আমাদের বর্তমান সভ্য সমাজটা দাঁড়িয়ে। সমাজে বাস করে কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, মাঝি, হরিজন, কবিরাজ, শিশু, যুব, প্রবীণ, ভিন্নভাবে সক্ষম (প্রতিবন্ধী), প্রাণসম্পদসহ সকল জীব। সকলের সমন্বয়ে আমরা ঠিকে আছি। পরস্পরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে আমাদের জীবনধারা রয়েছে চলমান। সকল শ্রেণী, পেশা ও বয়সের মানুষকে বিভিন্ন বিপদে-আপদে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে সমাজে টিকে থাকতে সহযোগিতা করে আসছে সমাজের কিছুসংখ্যক দরদী মানুষ। এসব দরদী মানুষ নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা থেকে নিজম্ব উদ্যোগে ও নিজস্ব সম্পদ দিয়ে বিভিন্ন সময় সাধ্যমত সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করে আসছে। এসব কতিপয় উদ্যোগী ব্যক্তিদের এমন মহতী উদ্যোগের ফলে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠী কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে।