পছন্দের ধানের জাত পেয়ে নেত্রকোনার কৃষকরা আনন্দিত

নেত্রকোনা থেকে শংকর ম্রং

গতকাল আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামে বারসিক ও স্থানীয় কৃষকদের উদ্যোগে আমন মৌসুমে এলাকা উপযোগি ধানের জাত নির্বাচনের জন্য ৩৯টি স্থানীয় ধানের জাত নিয়ে পরিচালিত প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল সহভাগিতার জন্য এক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাঠ দিবসে নেত্রকোনা জেলার তিনটি উপজেলার (নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া ও মদন) ৭টি ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের ২০ জন কৃষক-কৃষাণী আংশগ্রহণ করেন।

অংশগ্রহণকারীরা ১০ শতাংশ জমিতে ৮ ফুট বাই ৮ ফুট সাইজের প্লটে স্থানীয় জাত এবং সংকরায়নের মাধ্যমে ফিলিপিনি কৃষকদের উদ্ভাবিত মোট ৩৯টি জাতের প্লট সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। অংশগ্রহণকারী ১২ জন কৃষক-কৃষাণী (কৃষাণী-৩ জন) বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে ১৩টি জাত নির্বাচন করেন।

অংশগ্রহণকারী কৃষক-কৃষাণী তাদের পছন্দ করা ধানের জাতগুলোর বীজের জন্য বারসিক’র নিকট চাহিদা প্রদান করেন। আগামী আমন মৌসুমের বীজতলা তৈরির কিছুদিন আগেই তারা এসব জাতের বীজ বারসিক অফিস থেকে সংগ্রহ করার আশা ব্যক্ত করেন।

IMG_20191118_114949-W600
কৃষক তোফাজ্জল হোসেন মাঠ দিবসের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘এর পূর্বে আমি কখনো এতগুলো ধানের জাত একত্রে জমিতে চাষ করতে দেখিনি। বারসিক’র মাঠে এসে চার শতাধিক ধানের জাত একত্রে দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে। প্লট থেকে আমি পাটনাই, বিকল্প ও বোরোঝাকি এই তিনটি স্থানীয় ধানের জাত নির্বাচন করেছি আগামী আমন মৌসুম চাষ করার জন্য।’

বালি গ্রামের কৃষক ইমরান মিয়া বলেন, ‘আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষি কাজ করি। কৃষক মাঠ দিবসে এসে বারসিক’র গবেষণা প্লট ও ধানের জাত সংরক্ষণ প্লট দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি গবেষণা প্লট ও সংরক্ষণ প্লট পরিদর্শন করে মোট ১২টি ধানের জাত বাছাই করেছি। এসব জাতের বীজ পেলে আমি আগামী আমন মৌসুমে বৈচিত্র্যময় ধানের জাত চাষ করবো এবং বীজ নিজেই সংরক্ষণ করবো।’

গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘আমি হাওরের জমিতে দেরিতে চাষ করা যায় এবং রোগ-বালাই সহনশীল এমন চারটি জাতের ধান নির্বাচন করেছি। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর এগুলো রোপণ করে ভালো ফলন পাব বলে আমি আশা করি।’

IMG_20191118_122940-W600
লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি বারসিক’র গবেষণা প্লট ও জাত সংরক্ষণ প্লট পরিদর্শন করে খুবই আনন্দিত। আমি গবেষণা প্লট থেকে পাটনাই, বিকল্প ও বোরোঝাকি এই তিনটি স্থানীয় ধানের জাত নির্বাচন করেছি। এসব জাত পেলে আগামী মৌসুমে আমার ধানের জাতবৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে এবং আমার এলাকায় পরবর্তীতে জাতগুলো অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে বিস্তার ঘটাতে পারব।’

তেলিগাতী ইউনিয়নের কৃষাণী ফেরদৌসী, হাছনা আক্তার ও কল্পনা আক্তারও তিনটি করে স্থানীয় ধানের জাত নির্বাচন করেছেন। এসব ধানের বীজ পেলে তারা আগামী মৌসুমে জমিতে চাষ করে নিজেরাই বীজ সংরক্ষণ করবেন এবং এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে এগুলোর সম্প্রসারণ করবেন বলে জানান।

মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী হাওরাঞ্চলের কৃষক এবং চল্লিশা ইউনিয়নের কৃষকরা ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধানের বিকল্প জাত (আগাম, ফলন ভালো ও রোগ-বালাই সহনশীল) নির্বাচনের জন্য বোরো মৌসুমে হয় এমন স্থানীয় ধানের বীজ বারসিক’র নিকট থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যান।

IMG_20191118_115721-W600

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে বারসিক’র সহযোগি সমন্বয়কারী শংকর ¤্রং কৃষক মাঠ দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের বর্তমান কৃষি মূলত বাজার ও কোম্পানি নির্ভরশীল। বীজ থেকে শুরু করে সকল কৃষিউপকরণের জন্য আমাদের কৃষকরা বাজার ও কোম্পানির উপর নির্ভর করে। ফলে বাজারে এসব কৃষি উপকরণের সংকট হলেই এগুলোর মূল্য কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ফলে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় হয় বেশি কিন্তু লাভ হয় তুলনামূলক অনেক কম। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ধান ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে কৃষকরা ব্যাপক লোকসানের সন্মূখীন হয়। হাওরাঞ্চলের কৃষকরা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূক্তভোগি। আবার বাজার থেকে বীজ কিনতে গিয়েও তারা প্রতারণার শিকার হয়। কৃষির প্রধান উপকরণ ধানের ভালো জাত নির্বাচন, মানসম্মত বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে পছন্দের ধানের জাত কৃষকদের মধ্যে সহজলভ্য করা এবং গবেষণার ফলাফল এলাকার কৃষকদের মধ্যে প্রচারের লক্ষ্যেই আমন ২০১৯ মৌসুমে পরিচালিত প্রায়োগিক গবেষণা মাঠকে কেন্দ্র করে এ কৃষক মাঠ দিবস আয়োজন করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য যে, বারসিক পরিচালিত এলাকা উপযোগি ধানের জাত নির্বাচনে প্রায়োগিক গবেষণাধীন ৩৯টি জাতসহ বারসিক’র জাত সংরক্ষণ প্লটে মোট ৩১৫ ধান চাষ করা হয়েছে, যার অধিকাংশই বর্তমানে কাটার উপযোগি।

happy wheels 2

Comments