ভাগ্য উন্নয়নে প্রভাতী রানীর প্রচেষ্টা

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

সমাজ সংস্কৃতি ও পারিবারিক উন্নয়নের সাথে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা নিজেদের সংগ্রাম সাহস আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন। সময়ের সাথে সাথে নারীরা নিজের গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি পরিবারের অর্থনৈতিক কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে উন্নয়নের সহযাত্রী হয়ে ভূমিকা পালন রেখে চলেছেন। নিজের ভাগ্য উন্নয়নের আশায় দর্জি প্রশিক্ষক হয়ে এলাকার নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন উদ্যোগী নারী প্রভাতী রানী।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব ঝাপা গ্রামের প্রভাতী রানী (৪০) তেমনই একজন আত্মপ্রত্যয়ী নারী। স্বামী, শ^শুর, শ^াশড়ি ও দুই সন্তানসহ ৬ সদস্যের ছোট্ট সংসার তার। স্বামী গোলকবিহারী মৃধা (৪৫) পেশায় গায়ক (নামকীর্তন দলের সদস্য)। ছেলে গতি মৃধা (১৪) ৮ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করে ও ৪ বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে তাঁর। নিজেদের ১০ শতক বসতভিটায় মৌসুমভিত্তিক নানা জাতের কৃষি ফসল উৎপাদন করে সংসারের আংশিক চাহিদা পূরণ হলে বাকি অংশ নির্ভর করতে হয় পুরোপুরি বাজারের উপর। অভাবের মধ্য থেকে নিজেই খুঁজতে থাকে নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক মুক্তির পথ। যুক্ত হয় বারসিক’র সাথে।

২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারিিসক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাঁপা গ্রামে জবা সিএসও দলে যুক্ত হয় প্রভাতী রানী। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক দলীয় আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করেন। কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে তার পারিবারিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসেবে ছিট কাপড় উপকরণ সহযোগিতা করা হয়। পরিবেশ প্রকল্প থেকে তাকে একই সাথে একটি কদবেল ও সবেদার চারা, কিছু বর্ষাকালীন বীজ ও দু’টি হাঁস সহযোগিতা পান। এরপর বারসিক এর নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি নিজেকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করার সুযোগ পান। তার বাড়িতে আগে থেকেই একটি সেলাই মেশিন ছিল। ছিটকাপড় সহযোগিতা পাওয়ার পরে সেলাই মেশিনের কাজের মাধ্যমে নিজের আয়ের চাকা কিছুটা সচল হয়। নিজের কাছে একদিকে সেলাই মেশিনের জন্য মানুষ পোশাক তৈরি করতে আসে অপরদিকে গ্রামের মানুষ তার কাছে আসলেই পছন্দের ছিটকাপড় পেয়ে যায়। এভাবেই দুটি বিষয়ের বদৌলতে তার দৈনিক আয় বেড়ে যায়। সে একই সাথে এলাকার আগ্রহী উদ্যোগী মানুষকে দর্জির প্রশিক্ষণ দিয়ে বাড়তি একটা আয়ের পথ তৈরি করেছেন।

প্রভাতী রাণী এ বিষয়ে বলেন, “স্বামীর একার আয়ে বর্তমান সময়ে টিকে থাক কস্টকর, তাই সংসারের আয় বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের কাজ করি বিশেষ করে সেলাই মেশিন ও ছিটকাপড় বিক্রি করে আয় করছি। আমি বারসিক থেকে ছিটকাপড় সহযোগিতা নিয়ে আমার ব্যবসাটাকে ভালোভাবে চালু করতে পারছি। লাভের টাকা দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় খরচ মিটিয়ে নিয়মিত সঞ্চয় জমা করি।” সপ্তাহ বা ১৫ দিন পর পর মালমাল বিক্রির টাকা একত্রিত করে পুনরায় ছিটকাপড় কিনে এনে ব্যবসাকে সমৃদ্ধি করে চলেছেন।

প্রকল্পের অংশগ্রহণকারী সদস্য/ সদস্যের সন্তান-সন্ততিদের আগ্রহ ও বর্তমান বাজার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই অংশ বিশেষ তিনি বারসিক এর একজন সেলাই প্রশিক্ষক হিসেবে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ৫ জন নারীকে হাতে কলমে সেলাই প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। এখান থেকে যে আয় হবে সেটা দিয়ে নিজের কিডনির চিকিৎসার কাজের পাশাপাশি সংসারে ব্যয় করা ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।

প্রভাতী রানীর মত এমনিভাবে উপকুলীয় অঞ্চলের নারীরা নিজেদের আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও আত্মপ্রত্যয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন জয়ের আশায় কঠোর দায়িত্ব পালন করছে।

happy wheels 2

Comments