গুণবতী লজ্জাবতী

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রেখে যে উদ্ভিদের নাম রাখা হয়েছে তার নাম লজ্জাবতী। লজ্জাবতী লাজুক প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যাপক এলাকায় পরিচিত। মানুষ যেমন লজ্জায় মাথা নত করে ঠিক তেমনি এটা কোন কিছুর স্পর্শ পেলেই লজ্জায় নিজেকে গুটিয়ে নেয়। লজ্জা পেলে জড়সড় হয়ে যায়, পাতাগুলো নেতিয়ে পড়ে। বাসর রাতের নববধূর মত লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ৮/০১ মিনিট পরে আবার স্বমহিমায় নিজের স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসে। লজ্জাবতী মূলত এক ধরনের লতানো ঘাষ জাতীয় উদ্ভিদ। এর অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে।
লজ্জা রাঙা লজ্জাবতী (4)
লজ্জাবতীর বৈজ্ঞানিক নাম হল MIMOSA PUDIKA মিমোসা পুডিকা। মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে এটার প্রথম দেখা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বিশ্বের সর্বত্র এটার বংশবিস্তার করে। এটা মূলত বর্ষাকালে জন্মে। তবে সঠিক পরিচর্যায় এটা সব ঋতুতেই জন্মাতে পারে। এটা এক ধরনের লতানো উদ্ভিদ। এটার উচ্চতা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। তবে সাধারণত ৩০-৪০ ফুট লম্বা হতে পারে বলে মনে করা হয়। লতার মত এর কান্ড সস্প্রসারিত হয়। কান্ডের গায়ে ১-২ ইঞ্চি পর পর চিকন কাটা থাকে। পাতার রঙ সবুজ। অনেকটা তেতুল পাতার মত দেখতে। প্রতিটা পাতার বোটায় আবার চিরল আকারের ১৮ থেকে ২০ জোড়া চিকন জোড়া পাতা থাকে। এর গোলাকৃতির ফুলটা দেখতে মেয়েদের নাকফুলের মত। পাপড়িবিহীন বাবলার ফুলের মত বেগুনি রঙয়ের ছোট ছোট ফুলগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। অসংখ্য কিশোরের মাধ্যেমে ফোঁটা ফুল বিমোহিত করবে সকলকে। লজ্জাবতীর ফল মাসকলাই ডালের মত দেখতে। এক বোটায় ধোকা আকারে একগুচ্ছ ফল থাকে। প্রতিটা ফলের মধে ৫টি করে বীজ থাকে।
লজ্জা রাঙা লজ্জাবতী (3)
এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষিপদক প্রাপ্ত কৃষাণী অল্পনা রানী বলেন, “লজ্জাবতী আমাদের নানা উপকারে কাজে লাগে কিন্তু আমাদের এলাকায় আগের মত এখন আর লজ্জাবতী গাছ নেই। কারণ মানুষেরা ঝোপঝাড় কেটে ফেলছে, এর পরিবেশ নষ্ট করছে, তাই আমরা কেউ কেউ এ উদ্ভিদটি বাড়িতে লাগিয়ে সংরক্ষণ করছি। আমার বাড়িতে লাল লজ্জাবতী, স্বেত লজ্জাবতী ও পুকুরের লজ্জাবতী গাছ রয়েছে।”

লজ্জাবতীর লজ্জায় যেমন আনন্দ পাওয়া যায়, তেমনি রয়েছে এর নানা গুন। গ্রাম-গঞ্জে ভেষজ চিকিৎসায় এ উদ্ভিদের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। লজ্জাবতীর সকল অংশ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। জ্বর, আমাশয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, ব্যথা, ধাতুরোগ ও যৌন সমস্যায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। লাবণ্য ধরে রাখতে এই গাছ বেটে গায়ে মাখা যায়। গাছের শুকনো গুড়া খেলে চর্মরোগ ভালো হয়। শিকড়ে অর্শ্বরোগ ভালো হয়। গায়ের দূগন্ধ দুর করতে এটা ব্যবহার করা যায়।

আগের মত গ্রামাঞ্চলে বা ঝোপ জঙ্গলে লজ্জাবতীর দেখা পাওয়া যায় না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বসতি স্থাপন, বনাঞ্চল উজাড় ও পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার কারণে অতি ঔষধিগুন সম্পন্ন এই উদ্ভিদটি প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে। তবে অনেক প্রকৃতিপ্রেমী ব্যক্তি নিজেদের উদ্যোগে গুণবতী লজ্জাবতীকে সংরক্ষণ করে চলেছেন।

happy wheels 2

Comments