আমরাও পারি
আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) থেকে
ক্ষমতাসীন দলের গুটি কয়েক মাটি ব্যবসায়ীদের ট্রাকের চাকায় লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী- বাঠুইমুড়ি বেরীবাঁধের রাস্তাটি। বর্তমানে বেহালদশায় এই রাস্তা দিয়ে যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বাঠুইমুড়ী, নয়াচর, তাড়াইল, বানিয়াজুরীসহ কমপক্ষে ৮ গ্রামের হাজারো মানুষ। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছেন। সম্প্রতি তারা মেরামতের কাজ হাত দিয়েছেন।
জানা যায়, রাস্তাটি মেরামত না করা এবং ট্রাক চলাচল বন্ধ না হওয়ায় ওইসব এলাকার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ। বেড়িবাঁধের রাস্তাটি দিয়ে কমপক্ষে হাজারো মানুষ প্রতিদিন জেলা শহর, উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এ রাস্তা ব্যবহার করে। এলাকার কৃষি পণ্য পরিবহনে তিনগুণ অর্থ অপচয় করতে হয় এলাকাবাসীদের। শিক্ষার্থী ও চাকুরীজীবিরা সময়মত কর্মক্ষেত্রে পৌছাতে পারেন না। গত বছর এলাকাবাসীর দাবির মুখে বানিয়াজুরী অংশে রাস্তার মুখে বেড়া দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু এ বছর মাটি ব্যবসায়ীরা সেই বেড়া ভেঙে আবার ট্রাক দিয়ে মাটি বহন করছে। ফলে চার কিলোমিটার রাস্তাজুড়েই বড় বড় গর্ত আর পানি জমে রয়েছে। এ ছাড়া পুরো রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়েই গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নিজ উদ্যোগে এলাকাবাসী গতকাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি মেরামতের কাজ করছে।
সম্প্রতি দেখা গেল, বানিয়জুরী, তাড়াইল, নয়াচরসহ আরো কয়েকটি গ্রামের তরুণ ও বয়স্ক মানুষজন স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি মেরামত করছেন। নিজ উদ্যোগে তারা ৭ দিনের কর্মসূচির মাধ্যমে রাস্তা মেরামতের কাজ হাতে নিয়েছেন। তাদের সাথে কাজ করছেন, রিকশা, ভ্যান, অটোবাইক চালকসহ এলাকার কয়েকটি সংগঠনের যুব সদস্যরা।
স্বেচ্ছাশ্রমে অনেকের সাথেই রাস্তা মেরামতের কাজ করছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ নূরুল ইসলাম। তিনি জানান, এই রাস্তার পাশেই তার বসত বাড়ি। মাটির ট্রাক চলাচলের কারনে এই রাস্তাটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যেন দেখার কেউ নেই। রাস্তা এখন আর রাস্তা নেই। বড় বড় গর্ত আর জমে থাকা পানিতে পায়ে হেঁটে চলাই মুশকিল। তিনি বলেন, “কি আর করার। এই বয়সেও ছেলে-পেলেদের সাথে কাজে নেমে পড়ছি।” রিকশা চালক শুকুর আলী বলেন, “এই রাস্তার দীর্ঘদিন ধরে রিকশা চালাইতে পারিনা। তাই বাধ্য হয়ে অন্য রাস্তায় চালাই। রোজগার কমে গেছে।”
তাড়াইল গ্রামের মোস্তাক আলী বলেন, “আমরা জন্মলগ্ন থেকেই এই বেরী বাঁধের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। বর্তমানে রাস্তার যে ভয়াবহ অবস্থা এতে করে গ্রামের কোন মানুষ অসুস্থ হয়ে পরলে কোন যানবাহন, এমনকি রিকশা পর্যন্ত চলাচলের অবস্থা নেই। দূর-দূরান্তে অবস্থান করা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু বান্ধবরাও ৪ কিলোমিটার রাস্তার কাঁদা -পানি পাড়ি দিয়ে কেউ আসতে চায়না। শুধু এই রাস্তাটুকুর কারণেই এলাকার ছেলে-মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। খুব কষ্টে আছি, দেখার কেউ নেই।”
সিংগাপুর প্রবাসী তাড়াইল গ্রামের আজমাইন হোসেন অপু বলেন, “কয়েকদিন হলো দেশের বাইরে থেকে আসছি। রাস্তার বেহাল দশার জন্য মালামাল নিয়ে আমার বহনকারী মাইক্রোবাসটি বাড়ির সামনে নিতে পারিনি। গ্রামের তরুণ-যবকরা নিজ উদ্যোগে রাস্তাটি মেরামত করে দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, আমরাও পারি।”
জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি সংস্কারসহ পাকাকরণের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের। এলাকাবাসীর দাবি, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আশ্বাসে অপেক্ষার প্রহর এখন অবিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। তাই গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংষ্কার করার পর চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।