জেগে উঠা বালু চরে বাদাম চাষ

হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন ও সত্যরঞ্জন সাহা

হরিরামপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। প্রতিবছর নদী ভাঙনের কারণে অনেক আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে অনাবাদী জমিতে পরিণত হয়। নদীর পানির গতিধারা পরিবর্তন হয়ে মাঝে মাঝে জেগে উঠে খন্ড খন্ড চর। কৃষকরা ফিরিয়ে পান তাদের হারিয়ে যাওয়া আবাদি জমি। স্বস্তির নিঃশ্বাস যেন ফিরে পান তারা। তাদের মাঠ ফসলের ক্ষেতে শুধু বালু আর বালু হলেও ২/১ বছর পার হলে আস্তে আস্তে বালির উপরের অংশে পলি দোঁআশ পরতে থাকে। মাটির অবস্থান বুঝে কৃষকরা ফসলের জাত নির্বাচন করে।

হরিরামপুর উপজেলা রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাহিরচর, দড়িকান্দি, আলগিচর, বয়রা ইউনিয়নের খালপাড়া বযরা, কর্মকারকান্দি, চরকান্দি, হারুকান্দি এলাকায় পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে জেগে উঠেছে প্রায় ৭০০ একর জমি। এ সকল জমিতে কালি বোরো, বাদাম, তিল, কাউন চাষ করা যায়। বিশেষ করে জেগে উঠা বালু চরে কৃষকদের বাদাম চাষ করতে দেখা যায়। কর্মকারকান্দি কৃষকদের কয়েকজন বাদাম চাষীর সাথে আলোচনা করে তাঁরা বলেন, “৮ বছর পরে আমাদের পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া জমি জেগে উঠেছে। আমরা অনেক কৃষক এখন নদীর কোলঘেঁষে জেগে উঠা বালু চরে এখন বাদাম, তিল, কালো বোরো ধান চাষ করতে পারছি।”

হরিরামপুর উপজেলার রামকৃপুর ইউনিয়ন থেকে হারুকান্দি ধুরশুরা ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় ৭০০ একর জমিতে বাদাম চাষ করছেন কৃষক। ফাল্গুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বাদাম লাগানো শুরু হয় এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বাদাম তোলা শুরু হয়। বন্যা আসার আগেই কৃষকরা বাদাম ঘরে তুলতে পারে বলে তারা অনেক খুশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাদাম চাষ এই এলাকায় ভূমিকা রাখছে। এই প্রসঙ্গে কর্মকারকান্দি গ্রামের কৃষক আরশেদ আলী (৪৫) বলেন, “আমি ৩ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আমি আশা করছি ৩০ হাজার টাকা বাদাম বিক্রি করতে পারব।”

Exif_JPEG_420

কৃষকদের বাদাম ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, নারী ও পুরুষ সকলে মিলে এক সাথে বাদাম সংগ্রহ করছেন। বাদাম চাষি এবং জমির মালিক আরশেদ আলী বলেন, “যারা আমার জমিতে যারা বাদাম সংগ্রহ করছেন তাদের কাউকে আমি শ্রমিক হিসেবে নেই নাই। চরে বাদাম তোলার খবর পাওয়ার পর সবাই বাদাম তুলে দিয়ে পরিবর্তে বাদাম নিয়ে যায়।” এলাকার নারী কৃষাণীরা বাদাম চাষির জমিতে বাদাম সংগ্রহ করে দিলে ৭ ভাগের ১ ভাগ তারা পায়। দিন শেষে দেখা একজন কৃষাণী ৬/৭ কেজি বাদাম ভাগে পায় যার বাজার মুল্য ৪০০-৪৫০ টাকা।

একজনের জমিতে বাদাম তোলার খবর দিলে পাশের গ্রামের পাড়া প্রতিবেশি আত্মীয়স্বজন এরা বাদাম তোলার কাজে চলে আসেন। সকল কৃষক-কৃষাণী আনন্দের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কাজ করে থাকেন। বাদাম সংগ্রহ করতে আসা কর্মকার কান্দি গ্রামের একজন নারী কৃষাণী আয়শা বেগম বলেন, “আমার ২ টি ছেলে এবং মেয়ে স্কুলে যায় । স্কুলে গিয়ে ঝালমুড়ি, চিপস, বারোভাজা, আচার, চটপটি এ সকল খাবার খায় । ফলে প্রতিদিন ১০-১৫ টাকা করে দিতে হয় । আর বাড়িতে যদি বাদাম থাকে বাড়ি নাস্তার পাশাপাশি বাদাম ভাজা দেই। ফলে বাইরে কেনা খাবার খায় না এবং আমার টাকা খরচ হয় না । তাই অন্যর জমি বাদাম সংগ্রহ করে রাখি। এছাড়াও বাদাম ভর্তা করে খিচুরি ও ভাতের সাথে খেতে পারি। পায়েশ ও পিঠায় তৈরি করতে বাদাম দিলে অনেক সুস্বাদু হয়।”

happy wheels 2

Comments