ফিরে আসবে সোনালি আঁশের সোনালি দিন
মানিকগঞ্জ থেকে নজরুল ইসলাম
ছোটবেলায় বইয়ের পাতায় আমাদের প্রথম যে পাঠগুলো ছিল তার মধ্যে একটি হলো পাট হলো সোনালি আঁশ, পাট অর্থকরি ফসল, পাট বিক্রি করে আমরা প্রচুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করি। এরকম অনেক কথা ও লিখা আমাদের দেখতে ও পড়তে হতো।
আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে শুনতাম যেদিন পাট বিক্রি হতো সেদিন বাড়িতে ইলিশ মাছ আর মিষ্টি নিয়ে আসা ছিল অবশ্যকীয়। কিন্তু সময় পাল্টায়, পাল্টায় ইতিহাসও। আজও পাট সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচিত থাকলেও কৃষকের কাছে এখন তা সবচেয়ে লাভজনক শস্য নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পাট দেশের প্রধান শিল্প এবং প্রধান অর্থকরি ফসল হিসেবে দেশের চাহিদা পূরণ করেও বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে কিন্তু সোনালি আঁশের সেই সোনালি দিন আর নেই।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের পর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এর বিপর্যয়ের ফলে বিশ্ব এক মেরুতে পরিণত হয়। শুরু হয় বিশ্ব পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা। বাজার অর্থনীতির এই বিকাশের যুগে বিশ্বের ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রধান শিল্পের লাগাম টেনে ধরার জন্য প্লাস্টিক ও পলিথিন শিল্পের বিকাশ ঘটায়। দেশের সোনালি আঁশের জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়। পৃথিবীর বৃহত্তম জুট মিল আদমজী স্বাধীনতার আগে ছিল একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান কিন্তু ৯০ পরবর্তী সময়ে তা গুণতে থাকে লোকসান। বিশ্ব ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ি তা বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশের পাট শিল্প ধ্বংস আরো ত্বরান্বিত হয়। বাংলাদেশে পাটকল বন্ধ করার জন্য এই বিশ্বব্যাংক টাকা দিয়েছিলো। অথচ ভারতকে পাটকল স্থাপনের জন্য আবার এই বিশ্বব্যাংকই টাকা দিল। কী বিপরীত মনোভাব! যাহোক এ পরিস্থিতিতে একটি কথাই বলতে হয় বাংলাদেশের পাট শিল্পটি অনেক বড় ষড়যন্ত্রের শিকার। তাইতো আমাদের কৃষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরও তার ন্যায্য দাম পান না। এ অবস্থায় দিন দিন পাটের চাষ আরো কমে যাচ্ছে।
তবে বর্তমান সরকার পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে গবেষণার জন্য বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে পাটকে আরো বিকশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ও তার গবেষক দল পাটের জীনম আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে পাটশিল্প গবেষণা কেন্দ্র পাটের ছত্রাক আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে এখন সাদা পাট আর পচবে না। এই আবিস্কারের ফলে পাট রপ্তানি ও পাটের জিনিস তৈরিতে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে সোনালি আঁশ আবারো তার পুরানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
বর্তমান সরকার ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে পলিথিন জাতীয় বস্তা ও ভারি আকারের পলিথিন নিষিদ্ধ ও শর্তযুক্ত কিছু পলিথিন অবমুক্ত রাখে। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমান আদালত দ্বারা পলিথিন জাতীয় ব্যাগ, বস্তা ব্যবহারের দায়ে ব্যবসায়িদের জরিমানাসহ শাস্তি প্রদান করছে। ফলে পাট জাতীয় দ্রব্যের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের কৃষকরা তাই আশাবাদী আবারো ফিরে আসবে সোনালি আঁশের সেই সোনালি দিন।