বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদে সফল নীলা রানী

সাতক্ষীরা থেকে প্রতিমা রানী

কৃষিকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন উপকূলীয় অনেক পরিবার। তেমনি এক সফল দম্পতি হল আবাদ চন্ডিপুর গ্রামের নীলা (৪৫) গিরিশ (৪৮) দম্পতি। উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের আবাদ চন্ডিপুর গ্রামের এই দম্পতি নিজেদের উদ্যোগে নিজের বাড়িটিকে সমন্বিত কৃষি খামার হিসেবে গড়ে তুলেছেন। নিজেদের বসতভিটায় বছরব্যাপী বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষির এই সফলতা অর্জন করেছেন।


দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজন কৃষিকে আকড়ে ধরে টিকে আছেন। স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে পরিকল্পনা করে নিজেদের জায়গাটুকুর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বছরব্যাপী মৌসুমভিত্তিক ফসল উৎপাদন করেন। তার ক্ষেতের অভ্যন্তরে নানা প্রজাতির সবজি ও ফসল চাষ সবাইকে বিমোহিত করেন। জৈব পদ্ধতিতে নিবিড় যতœ ও পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন করেন সব ধরনের সবজি ও ফসল। তারা সারাবছর মৌসুমভিত্তিক বর্ষাকালীন কুশি, ঝিঙ্গা, তরুল, সীম, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, ঢেড়ষ, কামরাঙা, বেগুন, ঝাল, পুঁইশাক, ডেমোশাক, টমেটো, পালংশাক, লালশাক, তরমুজ, ওল, হলুদ, কচুরমূখী, উচ্ছে, লাউ, কলমীশাক, শীতকালীন মূলা, ওলকপি, বাঁধাকপি, বীটকপি, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ধনচে ও সরিষা, ধান ফসল চাষাবাদ করেন।


সবজি ক্ষেতের পাশেই নিজেদের মিষ্টি পানির পুকুর না থাকায় টিউবওয়েল এর পানি ব্যবহার করে সহজেই ফসল চাষাবাদ করতে পারেন। পরবর্তী বছর লাগানোর জন্য নানা ধরনের বীজ নিজের কাছে সংরক্ষণ করে থাকেন। তাদের বসতভিটায়, ফলজ বৃক্ষ হিসেবে আম, কলা, নারকেল, পেঁয়ারা, সবেদা, জামরুল, লেবু, খেজুর, কুল ইত্যাদি চাষাবাদ করেন। নিজেদের বসবাসের যায়গাটুকু বাদেই সম্পূর্ণ বসতভিটার সর্বত্তম ব্যবহার করেছেন। বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।


তাদের উৎপাদিত কৃষি ফসল নিজেদের পারিপারিক চাহিদা পূরণের পরে অবশিষ্ট সবজি স্থানীয়ভাবে এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। কৃষি ফসল উৎপাদনের টাকা তিনি সংসারের প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করার পাশাপাশি কিছু টাকা তিনি নিয়মিতভাবে সঞ্চয় করছেন।


এ প্রসঙ্গে নীলা রানী বলেন, “আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে বাড়িতে সবজি চাষ করি। নিজেদের পছন্দ মত এলাকা উপযোগী ফসল চাষাবাদ করি। এসকল ফসল চাষে তেমন একটা খরচ হয় না তাছাড়া বাজার থেকে খুব একটা সবজি কেনা লাগে না।”


স্থায়িত্বশীল কৃষি চর্চায় নীলা-গিরীশ দম্পতির ভুমিকা আমাদের কৃষি ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক খানি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। স্থায়িত্বশীল কৃষি জীবনকে টিকিয়ে রাখতে হলে স্থানীয় কৃষক কৃষাণীদের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অবদানের জন্য তাদেরকে মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের কাজকে আরো গতিশীল করার জন্য তাদের এই কাজের সম্মাননা প্রদান করে তাদের কাজকে ধরে রাখার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া উচিৎ।

happy wheels 2

Comments