সাম্প্রতিক পোস্ট

খবরের ফেরিওয়ালা সায়েদুর রহমান

মানিকগঞ্জ থেকে মো.নজরুল ইসলাম
“পেপার সায়েদুর, খবর সায়েদুর, সাইকেল সায়েদুর, হকার সায়েদুর” এই রকম ভিন্ন ভিন্ন নামে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের সমাজ সায়েদুরকে এভাবেই সম্বোধন করেন। আমরা সায়েদুরকে বলব এই সমাজের দর্পন, আলোর ফেরিওয়ালা ও প্রকৃত সংবাদের বাহক। আমাদের মানিকগঞ্জ শহরের পরিচিত মুখ মো. সায়েদুর রহমান তবে তাকে কেউ জানতে চায় না বুঝতে চায় না, আমরা তাকে জানতে ও বুঝতে চাই।

মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি ইউনিয়নের করচাবাঁধা গ্রামের এক প্রান্তিক ক্ষেতমজুর পরিবারে ২ রা মার্চ ১৯৮৫ সালে তার জন্ম। বিবাহিত জীবনে সায়েদুর তার স্ত্রী, মা ও ১ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে গ্রামীণ পরিসরে সংসার অতিবাহিত করছেন।
সায়েদুর ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে যৌথ পরিবারে বেশিদিন এক সাথে থাকতে পারে নি। ভাইয়েরা অসময়ে পৃথক হলে তার লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে ফলে বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেন নাই। ছাত্র জীবন থেকেই বই পড়ার প্রচুর ইচ্ছা ও লেখাপড়ায় প্রচুর ঝোঁক থাকার ফলে প্রতিদিনের খবরের কাগজ তার খুব্ই প্রিয়। এই পেশায় তাকে যুক্ত করেন তার বন্ধু আকরাম। সে মানিকগঞ্জ সংবাদপত্রের ডিলার বর্তমানে বিশিষ্ট সাংবাদিক। তার অনুপ্রেরণায় পেপার জগতে কাজ শুরু করেন এবং আকরাম এর পুরাতন বই ঘরে কাজ করতেন। এখন শুধু সকালে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পেপার দেন ও চলমান অবস্থায় কিছু বিক্রি করেন। ভোরে প্রতিদিন প্রকৃতির ডাকে ঘুম থেকে উঠে ঘরের গরু গোরায় বেঁেধ বাসস্ট্যান্ডে এসে পেপার নিয়ে ৯-১০ ঘটিকার মধ্যেই পেপার দেয়া শেষ কারেন। তারপরও অনেক মানুষের কথা শুনেন তিনি। তার মন খারাপ হয়, আবার সকালে সব ভুলে যান। মানুষের মাঝে থাকতে তার ভালো লাগে। সংবাদপত্র বিক্রি করে সামন্য মাইনে দিয়ে তো আর সংসার চলে না। বাড়িতে গরু পালন করেন, তার স্ত্রী ছাগল ও হাঁস, মুরগী পালন করেন, আমার নিজের জমি না থাকলেও কৃষি কাজ করেন। সবমিলিয়ে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে সংসারে সায়েদুর ভালই আছেন। তিনি বলেন, “আমি জীবনে কারো কাছে হাত পতি নাই। ছোট বেলায় খেলার ছলে আঘাত পেয়ে আমার এক চোখ অন্ধ হয়। তারপরও কারো কাছে মাথা নত করি নাই। প্রায় সারদিন সাইকেলের মধ্যে থাকি, আমি একটুও হতাশ নই; কারণ আমি সূর্যদয়ের আগেই ঘুম থেকে উঠি, শরীর ভালো আছে এভাবে কাজ করতে পারলেই আমি আমার নিজের প্রতি অনেক খুশি এ চেয়ে বেশি কিছু আমার নিজের কাছে চাই না। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি না কর্মেই বিশ্বাস করি।”

প্রযুক্তির যুগে ই-পেপার এর গুরুত্ব আগের চেয়ে বাড়লেও কাগজের পত্রিকার গুরুত্ব থাকবে তবে চাহিদা আগের চেয়ে কম। তিনি বলেন, “জাতীয় পত্রিকার চেয়ে স্থানীয় পত্রিকার গুরুত্ব অনেকেই বেশি দেন। একটি স্থানীয় পত্রিকার জন্য অনেকেই হন্য হয়ে খোঁজেন, আমার কাছেই আসতে হয়। কিন্তু মানুষ মূল্য দিতে জানেনা কৃতজ্ঞতা কম তারপরও আমি মানুষে বিশ্বাস, মানুষকে ভালোবাসি।” মানুষ যে দিন তার নিজের প্রতি ভয় রাখবে আত্মসমালোচনা করতে জানবে তখনই সমাজে কিছুটা শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সায়েদুর বিশ্বাস করেন নিজের প্রতি বিশ্বাস ও আশা থাকলে এবং আত্ম প্রতারণা না করলে সে মানুষ কখনো পরাজিত হতে পারে না।

happy wheels 2

Comments