খুঁজে পেলেন নতুন জাত
সাতক্ষীরা থেকে চম্পা রানী মল্লিক
‘আমার শ্বাশুরি একজন ডায়াবেটিকস রোগী ,সাথে রয়েছে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা। তাই তার চিকিৎসা খরচ ব্যয়বহুল, তবুও তিনি এসব খরচের জন্য হাত পাতেন না কারো কাছে। এমনকি খুটিনাটি খরচের টাকা চেয়ে কখনো বিরক্ত করেন না আমার শশুরকে। এসব খরচগুলো করে চলেছেন তার হাঁস-মুরগি পালনের টাকা থেকে।” বললেন শামীমা খাতুন। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কলবাড়ী গ্রামের নারী শামীমা খাতুন স্বামীর বাড়িতে এসে দেখেছেন শাশুরী (রফিকুন্নেছা ৬০) কিভাবে হাঁস, মুরগি পালন করছেন। আর তা দিয়ে কিভাবে তিনি তার ব্যক্তিগত খরচগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন।
শামীমা খাতুন তাঁর স্বামী শরিফুল ইসলামের সহযোগিতায় শ্বাশুরির কাছ থেকে ধারণা লাভ করে তিনি নিজেও হাঁস, মুরগি পালনে তৎপর হয়ে পড়েন। তিনি নানা জাতের হাঁস, মুরগি পালনের পাশাপাশি বর্তমানে আরো একটি নতুন জাত সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শামীমা খাতুন বলেন, ‘হাঁস- মুরগি পালনের ক্ষেত্রে আমি আমার শ্বাশুরিকে দেখেছি নতুন একটি নিয়ম খেয়াল করতে। যখন তিনি বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম বসাতেন, তখন ওই ডিমগুলো থেকে যে বাচ্চা ফুটতো সেগুলো তিনি ২৫/৩০ দিন রেখে যখন বুঝতে পারতেন যে, এর মধ্যে মোরগ বাচ্চা আছে তখন তিনি পুরানো মোরগটিকে বিক্রি করে দিতেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার শ্বাশুরির মতে, বেশি পুরানো মোরগ থাকলে মুরগি যে ডিম পাড়ে সে ডিম থেকে বাচ্চা কম ফোটে। তার এ সকল কাজ ও ধারণা আমার খুব ভালো লাগতো এবং পরবর্তিতে আমি ও আগ্রহী হলাম হাঁস, মুরগি পালতে। তাই আমি প্রথমে একটি মুরগি কিনে পালতে থাকি আর মুরগি তাওয়া নিলে আশে পাশের গ্রাম থেকে ডিম যোগাড় করে বসাতে থাকি। তা থেকে যা বাচ্ছা ফোটে কিছু রাখি কিছু বিক্রি করি।
শামীমা খাতুন জানান, তিনি ডিম বিক্রি করেন, আবার কখনো মুরগি বড় করেও বিক্রি করি। একইভাবে ৩/৪ বছর আগে তিনি কিছু ডিম আশেপাশের গ্রাম থেকে সংগ্রহ করে বসান এবং বাচ্চা ফোটার পরে কিছু বাচ্চা একটু দূরে এবং কিছু বাচ্চা পাশের একজন নারীর কাছে বিক্রি করেন। মাস দুই পরে একদিন ঘুরতে ঘুরতে পাশের সেই বাড়িতে যান। তিনি সেই মুরগিগুলো থেকে কিছু বিক্রি করতে চান। তিনি যে বাচ্চাগুলো ওই নারীর কাছে বিক্রি করেছিলেন তা থেকে একটি মুরগি অন্য সব মুরগি থেকে আলাদা। তিনি সেই মুরগিটা আবার কিনেন।সেটি পালন করতে থাকেন অন্যসব হাঁস মুরগীর সাথে।
শামীমা খাতুন বলেন, ‘এই মুরগিটি অন্যসব মুরগি থেকে আলাদা হওয়ায় প্রথমে ভালো লাগে। তাই ভালোলাগার পাশাপাশি অন্য মুরগি থেকে এটির ব্যবধানটাও আমি বোঝার চেষ্টা করতে থাকি। একদিন নিজ এলাকার একজন নারী মুরগিটি দেখে বললেন, “এটি সজারু জাতের মুরগি। তখন থেকে এবং পরবর্তিতে আরো মানুষের কাছ থেকে আমি এই মুরগির জাতটির নাম জানতে পারি। এটি আসলেই একটি ভিন্ন জাতের মুরগি। এই মুরগি একদিন পরপর ডিম দেয়। এভাবে একটানা দুই থেকে আড়াই মাস ডিম দেয়। তাড়াতাড়ি তাওয়া নেয়না। এ কারণে এই মুরগির ডিম আমরা অন্য মুরগির তাওয়ায় দিয়ে বাচ্চা ফোটাই। ওজন ও মাংস বেশি হয়। তবে স্বাভাবিকভাবে মুরগির তুলনায় মোরগের ওজন আরো বেশি হয়। ডিম পাড়া অবস্থায়ও একটি মুরগির ওজন এক থেকে দেড় কেজি থাকে।’
শামীমা খাতুন জানান, বর্তমানে এই মুরগিটি খুব কম দেখা যায় এবং চাহিদা আসছে খুব বেশি। তাই তিনি এই জাতটি সংরক্ষণের পাশাপাশি এর বিস্তার করতে চান।