হরিজন পল্লীর মেয়ে চাঁদনী শিক্ষার আলো ছড়ালো
নেত্রকোনা থেকে মো. অহিদুর রহমান
নেত্রকোনার হরিজন পল্লীর দুই আঁধার ঘরের আলো প্রিয়া বাঁশফোর, চাদনী বাঁশফোর আর পায়েল বাঁশফোর। নিতান্ত গরীব ঘরের সন্তান তারা। গত বছর প্রিয়া বাঁশফোর ও পায়েল বাশফোর এসএসসি পাশ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো নেত্রকোনা শহরবাসী ও শিক্ষাঙ্গণকে। আর এ বছর চাঁদনী বাশফোর আবারও উজ্জল করলো হরিজন পাড়ার দলিত পরিবারগুলোকে। চাঁদনী প্রিয়া বাঁশফোরের ছোট বোন। প্রিয়ার মা মিনতি বাশফোর ও তার বাবা পৌরসভায় ঝাড়ু– দেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে হরিজন জনগোষ্ঠী অন্যতম। পৌর এলাকায় পরিষ্কার পরিছন্নতা (ঝাড়ুদাড়) কর্মী, নরসুন্দর, জুতা সেলাই ও জুতা রঙের কাজ করে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন।
প্রিয়া ও চাদনীর বাবা-মা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মেয়ে দুটিকে খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়েছে। সমাজ ও সংসারে সকল বাধা অতিক্রম করে স্কুলে লেখাপড়া করেছে এবং এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা চালিয়ে ছিনিয়ে এনেছে একের পর এক সাফল্য। ’
গতবছর এসএসসি পাশ করার পর বারসিক নেত্রকোনা অঞ্চলের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ে বিশ্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দিবসে দলিত শ্রেণীর এই দুই কিশোরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং শিক্ষা উপকরণ প্রদান করে সন্মান জানানো হয়। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে নেত্রকোনা শিক্ষা, সংস্কৃতি পরিবেশ ও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি ও বারসিক’র পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী গ্রহণ করে।
পাশাপাশি বারসিক’র পক্ষ থেকে চকপাড়ার হরিজন পল্লীর পরিবারগুলোর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, আয়বৃদ্ধিমুলক কাজ ও সরকারি সেবা পরিসেবার সাথে যুক্ত করার জন্য গত একবছর কাজ করে গেছে। কাজের অংশ হিসেবে প্রিয়া বাশফোর ও পায়েলকে পড়াশুনার জন্য শিক্ষা উপকরণ প্রদান, প্রযুক্তিগত শিক্ষার জন্য প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ, হরিজনপাড়ার শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নে জন্য কিশোরী সংগঠন তৈরি, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত করানো হয়।
প্রিয়া বাশফোর ও চাদনী বাশফোরের মা মিনতি বাসফোর। মেয়েদের পড়াশুনা করানোর জন্য তাঁর খুব ইচ্ছে। মিনতি বাশফোরকে কবুতর পালনের জন্য তিনজোড়া কবুতর কিনে দেয়া হয় বারসিক’র পক্ষ থেকে। যাতে তাঁর মেয়েদের পড়াশুনার খরচ চালাতে পারেন। বর্তমানে মিনতি বাশফোরের কবুতরের সংখ্যা ১৪ জোড়া। মাসে গড়ে ১৫০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকার কবুতর বিক্রি করতে পারেন। বারসিক দলিত শ্রেণীর পরিবারগুলোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সাথে নিয়েই সমাজের উন্নয়ন করতে চায় বারসিক।