শরৎ শোভা শুভ্র কাঁশ ফুল
দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল:
চিক চিক করে বালি কোথা নাই কাদা
একধারে কাঁশবন ফুলে ফুলে সাদা।
আমাদের প্রাণ ও প্রকৃতির শোভন কাঁশ ফুল কাব্যে এভাবে স্থান পেয়েছে। কাঁশ ফুল শোভন শুভ্র ফুল। চোখে পড়লেই আমরা বুঝে নিতে পারি আবহমান বাংলায় এখন শরৎকাল। বিস্তীর্ণ নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাঁশ ফুলের সমারোহ শরৎ প্রকৃতির এক নান্দনিক রূপ। কাঁশ ফুল প্রাণবন্ত ঋতু শরৎকালীন ফুল। ধবল কাঁশফুল শোভন সুন্দর বলে সবুজ প্রাণ আর মেঘের আকাশ মিলে মূর্ত প্রকৃতি নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে। কাঁশ ফুল আবহমান বাংলার চিরায়ত শরতের সুনন্দ স্নিগ্ধ ফুল।
[su_carousel source=”media: 456″]
কাঁশ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। কাঁশ ফুল সাদা লোমের মত শুভ্রতা নিয়ে ফোটে। এর মঞ্জরি ১৫ থেকে ৩০ সেন্টি মিটার লম্বা হয়। গুচ্ছমূল জাতের কাঁশ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ । এর পাতা কিছুটা রুক্ষ্মতায় সরু সোজা রেখার মত। এর উচ্চতা তিন থেকে সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত হয়।
কাঁশ নদী তীর, জলাভূমি আবার কখনও উচু পতিত জমিতে গোছায় গোছায় জন্মে। কাশ ফুল (kansh) এর বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum spontaneum আর উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এর গোত্র পরিচিতি Poaceae। এর ইংরেজি নাম Giant Reed ।
কাঁশ ফুল কেবল প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে না । কাঁশ ঘাস শুকিয়ে গ্রাম দেশে মাদুর, ঘরের বেড়া ও ঘরের চালার ছাউনি তৈরি হয়। এছাড়া কাঁশ বন থেকে পাওয়া খড় ও ঝাটি পান বরজের জন্য দরকারি। কাঁশ খড় দিয়ে পান বরজের ছাউনী দেওয়া হয়। এছাড়া পান লতাকে উপরে উঠতে শলার (কঞ্চি) সাথে বেঁধে রাখতে খুব দরকারি শুকনো কাঁশ খড়। কাঁশ খড় দিয়ে পান লতা মুড়িয়ে কঞ্চির সাথে বাঁধতে যেমন সহজ তেমনি কাশ সহজে নষ্ট হয়না। ফলে কাঁশবন যেমন শরৎকালে প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে তেমনি এ উদ্ভিদের একটি বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে। কাঁশ থেকে কাগজের ম- তৈরি হয়। এছাড়া কাঁশ খড় গরু মহিষেরও বিশেষ খাদ্য।
কাঁশ বন উপকূলের নদ ও নদীর তীরে প্রকৃতিগতভাবে জন্মালেও দেশের কোথাও এর বাণিজ্যিক আবাদ রয়েছে। সাধারণত গজিয়ে ওঠা কাঁশ বনের আগাছা পরিষ্কার করে কিছুটা সার দিলে এর আবাদ সম্প্রসারণে অধিক সুবিধাা মেলে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে কাঁশ বন কেটে তা শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
কাঁশ একটি দরকারি উদ্ভিদ। কাঁশবন চাষে খরচ অল্প। দেশের কিছু কিছু এলাকায় এর সুরক্ষা ও চাষ আছে। আমাদের উপকূলীয় নদী তীরবর্তী এলাকায় আগে অনেক কাঁশবন দেখা গেলেও এখন অনেকটাই কমে গেছে।