ফুটেছে হেমন্ত রাঙানো ফুলেরা

মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক

হেমন্তের নরম মাটির গন্ধ আর নানা বর্ণের ফুলের সৌন্দর্যের আভাস পাওয়া যায় জীবনানন্দের কবিতায়।
‘আবার বছর কুড়ি পরে/হয়তো ধানের ছড়ার পাশে/কার্তিকের মাসে/তখন সন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে তখন হলুদ নদী/নরম নরম হয় শর কাঁশ হোগলায় মাঠের ভিতরে!’

শীতকে স্বাগত জানানো সেই মিষ্টি হেমন্ত ঋতু এখন শাসন করছে প্রকৃতিকে! নরম রোদের গন্ধে আকাশজুড়ে ছিন্ন ভিন্ন মেঘের উড়াউড়ি। কোমল বাতাস বড্ড বেপরোয়া, ভোরের সূর্যের সাথে হালকা কুয়াশার ঠুকাঠুকি জানান দেয়, এখন হেমন্ত। হেমন্তের প্রকৃতির বাহারী সজ্জায় অনুভূতির ছোঁয়া লাগে মনে! এ ঋতুতে ফোটে অপরাজিতা, ছাতিম, গন্ধরাজ, হাস্নাহেনা, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, মধুমঞ্জরি, দেবকাঞ্চন, রাজ অশোক। এগুলো ছাড়াও আমাদের দেশের বন-বাদারে, ঝোপে-ঝাড়ে কতই না বিচিত্র সব লতাগুল্মের ভেতরে ফুটে থাকা নাম না জানা কতই না ফুলেরা। ফুলের পাশাপাশি সাদা, নীল, সবুজ কিংবা গাঢ় লাল রঙের পাতা বাহারের পাতার বিন্যাসও নজর কাড়ে গভীরভাবে।

manikgonj-flower-pic

রূপে-গুণে অপূর্ব অপরাজিতা। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় এ ফুল। সৌখিনতার বশে অনেকেই টবে চাষ করে নীলাভ অপরাজিতার। গভীর রাতে ছাতিমের পাগলকরা গন্ধে উপচিয়ে যায় মন।

এ ঋতুর আরেক ফুল কাঞ্চন। রকমফেরে ভিন্ন হলেও সব কাঞ্চনই মনমুগ্ধকর। নাম শুনেই মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। চারদিকে তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে এ সময় ফোটে দেব কাঞ্চনের হালকা বেগুনী বা সাদাটে ফুল৷ এছাড়াও রক্তকাঞ্চন এবং সাদা কাঞ্চনের সৌন্দর্যের গড়নেও চোখ ফেরানো ভার। হেমন্তের স্বল্প শিশিরে ধোয়া শুভ্র শিউলি ফুল নিয়ে কত যে কবি মহোদয়েরা স্থান দিয়েছেন তাদের পান্ডুলিপিতে, তা বলাই মুস্কিল।

শিউলি ফুলকে আবার বলা হয় ‘দুঃখের বৃক্ষ’। এই শিউলি ফুলের গোপন ব্যথা, সে দিনের আলোতে উজ্জ্বলতা হারায়। প্রকৃতিতে ঘাপটি মেরে থাকা মল্লিকা, হিমঝুরি আর অশোক আড়মোড়া ভেঙে এই ঋতুতেই জানান দেয় তাদের রূপের-সৌন্দর্যের -গন্ধের। পথের ধারে আকন্দ ফুলের ঝাড়। এই ফুলের মোলায়েম পাতা ভেষজপাতি হিসেবে উপাদেয়কারী।
এছাড়াও আরো কত ঘাসজাতীয় বা বনজপাতির ফুল এই ঋতুতেই ফোটে। এ ঋতুতেই বাহারী রঙয়ের পাতাবাহার মেলে ধরে তাদের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য।

happy wheels 2