মনিকগঞ্জে দিন দিন কমে যাচ্ছে শুভ্র হাসির শ্বেত জবা

আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ থেকে ॥

“ঝুমকো জবা বনের দুল
উঠল ফুটে বনের ফুল।
সবুজ পাতা ঘোমটা খোলে,
ঝুমকো জবা হাওয়ায় দোলে।”

কবি ফররুখ আহমদের এ কবিতায়ই প্রমাণ কওে, সমস্ত ফুলের মাঝে জবার রয়েছে এক আলাদা রাজত্ব। আর সে রাজত্বের চিরন্তন সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষণই সাদা জবা। সাদা জবা; সাদার মাঝখানে অপূর্ব লাল চক্র, দেখলেই মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শ্বেত জবা বরাবরই আমাদের অগোচরে থেকে যায়। কালচে সবুজ গাছে শ্বেত শুভ্র জবার হাসি দেখে আকৃষ্ট হয় না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম।

manikgonj-sada-joba-ful
জবা আমাদের অতি পরিচিত একটা ফুল। সৌন্দর্য্য ও গুনাগুণের বিচারে “জবা”র জবাব মেলা ভার। নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর সাদা জবা সব মানুষের হৃদয়েই সুখকর আঁচর কাটে। ফুলপ্রেমীরা বাড়ির ছাদের টবে এ ফুল ফুটিয়ে থাকেন। মাঝারি আকারের ফুলটি কোমল হৃদয়কে আরও সতেজ করে তোলে। কাটিং কিংবা গুটি কলম করে এ গাছের বিস্তার ঘটানো সম্ভব। ৩০-৪০ মিটার মাটি ভর্তি টব হলেই চলে। এমনই তথ্য জানালেন এগ্রিকালচার এক্সটেনশন ডিপার্টমেন্টের সাব এসিস্ট্রেন্ট অফিসার শংকর সাহা।

সারা দেশের মতো মানিকগঞ্জেও অনেক বসত বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ভিটে, আবাদী, অনাবাদী জমি কিংবা ঝোঁপ-জঙ্গলে হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রজাতির জবা। ফুলের রঙ সাদা, হলুদ, কমলা, লাল ইত্যাদি হতে পারে। তবে দিন দিন কমে আসছে জবা ফুলের সংখ্যা বিশেষ করে সাদা জবা এখন চোখে পড়ে খুবই কম।

জবা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus rosa-sinensis। এটি সাধারণত: ৬ থেকে ১৬ ফুট উচ্চতার হয়ে থাকে। ফুলগুলোর ব্যাস ১০ সে.মি। জবা ফুল ঠোঙ্গা আকৃতির, পঞ্চমুখী, থোকা আকারের, নানান বর্ণের ঝোপ জাতীয় গাছ। সম্পূর্ণ ফুল বা শুধু পাপড়ি ও গাছের ছাল নানান কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বেশ প্রাচীনকাল থেকেই। মালয় উপদ্বীপে এ ফুলকে বলা হয় বুঙ্গা রায়য়া (Bunga Raya)। ১৯৮০ সালে মালয়েশিয়ায় জবা ফুলকে জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

শ্বেত জবা ফুলের লম্বা বৃত্ত থাকে। বৃত্তের শেষ মাথায় ফুলের পাঁচটি উপবৃতি আছে। উপবৃতির উপরে আছে ৫টি হালকা হলুদ রঙের বৃতি। এই বৃতিগুলো নলাকারে থাকে। এরপর রয়েছে মূল ফুল। ফুলের পাপড়ির সংখ্যা ৫টি। পাপড়িগুলো উপরের দিক একে অপরের সঙ্গে স্পর্শাকারে জড়িত এবং তলদেশের সঙ্গে সংযুক্ত। এসব তথ্য Hibiscus rosa-sinensis বিষয়ক বিভিন্ন জার্নালে পাওয়া গেছে।
manikgonj-sada-joba-ful-2
জবা গাছ খুবই সহজলভ্য। গ্রামের অনেক বাড়িতে অনায়াশেই এর চারা পাওয়া যায়। বর্ষাকালের কিছুদিন পরপরই ডাল কেটে লাগালেই হয়ে গেল জবা গাছ। প্রায় সারা বছরই ফুল পাওয়া যায়। তবে সর্বজন স্বীকৃত মত, বসত বাড়ির শোভা বর্ধনে জবা গাছের তুলনা নেই।

সাধনা ঔষধালয়ের হেকিম উত্তম পালিত জানান, জবা ফুলের ঔষধিগুণ একাধিক। এই ফুলের কুঁড়ির রস জ্বরনাশক। জবা ফুলের রস থেকে তৈরি করা জবাকুসুম তেল, যা অত্যন্ত উপকারী। এ তেল ব্যবহারে চুলপড়া বন্ধ হয় ও চুল ঘনকালো হয়। কবিরাজি, পূজা অর্চনা ও গ্রাম বাংলায় টোটকা ঔষধি হিসেবে জবা ফুলের ব্যবহার বহুবিধ। মূত্রাতিসার, অনিয়মিত মেয়েলি সমস্যা, চোখ উঠা, মাথায় টাক পোকা, হাত পা ও শরীরের চামড়া উঠা ইত্যাদি রোগ উপশমে এর কার্যকারিতার প্রমাণ রয়েছে।

মানিকগঞ্জ সদরের নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মী চ্যাটার্জী বলেন, “সৌন্দর্য্য ও মানুষের উপকারে জবা ফুলের গুরুত্ব অনেক। পূজা পার্বণে কাজেও ব্যহৃত হয়। তবে অপরিকল্পিত বসতবাড়ি নির্মাণ, বাড়ির সীমানায় অধিক লাভজনক বিভিন্ন ফলজ ও কাঠ গাছ রোপণ এবং ফুল গাছের বাগানের প্রতি অনাগ্রহের কারণে দিন দিন কমে আসছে জবা গাছের সংখ্যা। এ অবস্থায় আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা ও সৌন্দর্য্যরে প্রয়োজনে এর বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”

ঘিওর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশরাফ উজ্জামান বলেন, “জবা সৌন্দর্য্যরে প্রতীক। নানা গুণে গুণান্বিত সাদা রঙের জবা ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়।”

happy wheels 2