বেগুনি রঙের “বড়নখার” নানা গুণ
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক
বেগুনি রঙের অবারিত ও মুক্ত পাপড়ির ফুলওয়ালা জলজ উদ্ভিদ, দেখতে কচুরিপানা মনে হলেও এটি আসলে বড়নখা। অযত্নে বেড়ে ওঠা এই বড়নখা আমাদের সুন্দর ও রূপময় প্রকৃতিতে করেছে আরো সমৃদ্ধ। ছোটপানা বলেও ডাকা হয়। এদের যতœ করে ক্ষেত-খামারে চাষ করা হয় না।
গ্রামে এর ফুল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। তবে এই পাতাকে শুধু যে সবজি হিসেবেই খাওয়া যায় তাই নয়, বড়নখার রয়েছে যথেষ্ট ঔষধি গুণ। দাঁতের ব্যথায় এর শিকড়ের রস খুবই কার্যকরী, এর ছাল চুলকানি ও হাপানি রোগে ফলদায়ক। এছাড়াও এর শিকড় পেটের সমস্যা ও যকৃতের সমস্যায় ব্যবহার করা হয়।
কচুরিপানা আর বড়নখা একই পরিবারভুক্ত তবে গণ ভিন্ন। কচুরিপানার মত পাতা গোলাকৃতি নয়, অনেকটা বর্শা ফলার মত কাঁটা। কচুরিপানার আদি ভূমি ব্রাজিল আর বড়নখা আমাদের অঞ্চলের স্থানীয়। অন্যান্য পানার মত বড়নখাও জলজ উদ্ভিদ। তবে এঁরা জলের নিচের মাটিতে কান্ড গেঁথে রাখে। আমাদের দেশের নিচু ধানি জমি, জলা, বিল, পরিত্যক্ত বা পতিত ডোবার জলাভূমিতে দেখা যায় বড়নখা।
বড়নখার Common Name :Arrow Leaf Pondweed, Botanical Name : Monochoria hastate, Family :Pontederiaceae। বড়নখা ৫০ সেন্টিমিটার থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হয়। এর পাতা বর্শাকৃতির। এরা কচুরিপানার মতো গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার্য।
উদ্ভিদ ও প্রকৃতি বিষয়ক একটি জার্নাল মাধ্যম জানা যায়, ছয় থেকে নয় সেন্টিমিটার দীর্ঘ মঞ্জরিদন্ডের মাথায় একসঙ্গে ২৫ থেকে ৬০টি ফুলের একটি স্তবক থাকে। সব কটি ফুল মিলিয়ে একটি বড় আকৃতির ফুলের মতো, দেখতে সাদাটে বা রক্তবেগুনি। একটি পরাগধানীর রঙ নীল, ছয় মিলিমিটার লম্বা; অন্য পাঁচটি পরাগধানী হলুদ রঙের, চার মিলিমিটার লম্বা। ক্যাপসুল আকৃতির বীজগুলো সাত মিলিমিটার লম্বা। বেগুনি রঙের অবারিত ও মুক্ত পাপড়ির ফুল। মাটির কাছাকাছি থাকতেই পছন্দ, আবার নরম কাদামাটিতেও দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে।
একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে এই ফুলকে বিপদাপন্ন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আমাদের দেশে ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম গ্রীষ্ম থেকে শীত ঋতু পর্যন্ত। তবে যত্রতত্র বড়নখা বা ছোটপানা জন্মালেও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন জলাশয়, পরিত্যক্ত ডোবা ভরাট করে আবাসস্থল নির্মাণের ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে বড়নখার পরিমাণ। বড়নখা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ অস্ট্রেলিয়ায়ও দেখা যায়।