চিকিৎসক হয়ে একটি বৃদ্ধাশ্রম করবো
অসীম কুমার সরকার, তানোর (রাজশাহী) থেকে
ভাড়া করা ছোট্ট চা দোকান। তাতে একটু পরিধি বাড়িয়ে হোটেল। আর সেই হোটেলে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ করে গোল্ডেন এ প্লাস পেল কাওসার। তার মোট নম্বর ১১৫৮। হোটেলের ভেতর এক কোণে তাদের বসবাস। দু’ ভাইবোনের মধ্যে কাওসার বড়। তানোর পৌরশহরের চাপড়া এলাকার নহির উদ্দীনের ছেলে কাওসার আলী। অদম্য এই মেধাবী প্রথম থেকেই তার প্রতিভার দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে নিয়মিত। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি, অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি আর এবার এসএসসিতে পেল গোল্ডেন এ প্লাস।
সম্প্রতি বিকেলে চাপড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কড়ায়ে পিয়াজু ভাজছেন কাওসারের বাবা। মুড়ি, বুটছোলা, পিয়াজু, বেগুনি চারিদিকে সাজানো। আর সামনে কলার ছড়ি টাঙানো। মা কাজল রেখা ও কাওসার ইফতারী বেচাকেনায় ব্যস্ত।
এক ফাঁকে কথা হলো কাওসারের সাথে। সে বলে, ‘ছোটবেলা থেকে কোনদিন লেখাপড়ায় ফাঁকি দিইনি। অনেকে আমাকে নিয়ে কটুক্তি করেছে। ক্রিকেট খেলার ছলে ব্যাট দিয়ে নাকে মেরেছে। কিন্তু আমি ভেঙ্গে পড়িনি। পড়াশুনা চালিয়ে গেছি। ৫ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পা পিছলে কাদায় দুইবার আমার বাম হাত ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গা হাত নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে বৃত্তি পেয়েছি।’ সে আরও বলে, ‘অবসরে বই পড়ি। আমার বাবা অসুস্থতা নিয়েই জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। টাকার জন্য বাবার ভালো মতো চিকিৎসা করা হয়নি। যে সমস্ত বৃদ্ধ বাবা-মাকে কেউ দেখে না, তাদের দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। তাই আমার ইচ্ছে আমি চিকিৎসক হবো। আর চিকিৎসক হয়ে একটি বৃদ্ধাশ্রম করবো। সেই বৃদ্ধাশ্রমের মানুষগুলোকে আমি সেবা করবো জীবনভর।’
চাপড়া গ্রামের প্রতিবেশী মিজানুর রহমান জানান, হোটেল ব্যবসার উপর কাওসারদের সংসার চলে। কোন জায়গা-জমি নেই। নিজে হোটেলে কাজ করে মেধাবী কাওসার গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সত্যিই কাওসার গরীব ঘরে চাঁদের আলো।
কাওসারের মা কাজল রেখা বলেন, ‘ভাতের হোটেলে দিনরাত পরিশ্রম করে এক ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছি। স্বামীর চিকিৎসা, সংসারের খরচ চালাতেও হিমশিম খাচ্ছি। কিন্তু আমার যত কষ্টই হোক ছেলেকে আমি লেখাপড়া করিয়ে অনেক বড় করবো। ছেলে আমার খুব মেধাবী। স্কুলের এক অনুষ্ঠানে কাওসার ইংরেজিতে বক্তব্য দেয়ায় এমপি ফারুক চৌধুরী আমার হোটেলে এসে আর্থিক সহায়তা করে গেছেন।’
তানোর চাপড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলো কাওসার। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান জানান, কাওসার অত্যন্ত মেধাবী। কোনদিন স্কুলে ক্লাস মিস করেনি। আবার বাবা-মায়ের সাথে হোটেলে কাজও করছে। আমার বিশ^াস কাওসার একদিন অনেক বড় হয়ে পরিবার ও এলাকার সুনাম রাখবে।