নিজ হাতেই বীজ রাখেন চরের রাবেয়া
হরিরামপুর, মানিকঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রামচরের রাবেয়া। বয়স ৪৮। ৩০ বছর ধরে স্বামীর সংসারে বাড়ির কাজের পাশাপাশি কৃষি কাজে সহযোগিতা করে আসছেন তিনি। বাড়ির উঠানে, আশেপাশের আলান পালানে মাচা হাতেই মাচা করে লাউ, শিম, মিষ্টি কুমড়া, ঝিংগা, করল্লা, স্থানীয় জাতের বিচা কলা, মদনা ও সবরি কলা চাষ করে নিজ পরিবারে খাবারের চাহিদা পূরণের পাশপাশি বাজারে বিক্রি করে বেশ টাকা আয় করেন। এভাবে সংসারের খরচ কমাতে যেমন সহযোগিতা করছেন অন্যদিকে সংসারে তাঁর মতামত স্বামীর কাছে প্রাধান্য পায়।
চরের অনেক কৃষক-কৃষাণী বাজার থেকে বীজ কিনে আনলেও হরিরামপুর উপজেলার পাটগ্রামচরের কৃষাণী রাবেয়া বেগম নিজ হাতেই বীজ রাখেন। স্থানীয় জাতের লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, ডাটা, পুইশাকসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি নিজে উৎপাদনের পাশাপাশি বীজ নিজ বাড়িতে সংরক্ষণ করেন। ফলে নিজের প্রয়োজন মতো চাষ করতে পারছেন। বাজার থেকে কেনার ভরসা করতে হয় না। এই বিষয়ে রাবেয়া বেগম বলেন, “আমি হাট-বাজার থেকে কখন বীজ কিনি না। নিজে শাকসবজি চাষ করি আবার নিজেই বীজ সংরক্ষণ করি যাতে পরবর্তী বছর লাগাতে পারি। নিজ হাতে বীজ রাখি বলে নিজের পছন্দ মত জাত চাষ করতে পারি।”
কখন কোন ধরনের বীজ কিভাবে বাছাই, রোদে শুকানো, সংরক্ষণ সকল কৌশল দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন করতে শিখেছেন রাবেয়া। এছাড়া বারসিক’র সহযোগিতায় গ্রাম পর্যায়ে বীজ সংরক্ষণ ও ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন। প্লাস্টিকের কোটা, মাটির হাড়ি এবং বস্তায় পলিথিন ভিতরে দিয়ে বীজ সংরক্ষণ করেন। সংরক্ষিত বীজে যাতে সজীব থাকে পোকামাকড় এর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বীজ রাখার পাত্রে নিমপাতা/ তামাকপাতা শুকিয়ে পাত্রে রেখে দেন। এতে ফড়িং পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
রাবেয়া নিজের প্রয়োজনের বীজ কাজে লাগানোর পর গ্রামবাসীকে বিনামুল্যে বীজ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন। চলতি মৌসুমে মোট ১৫ জন কৃষককে লাউ, শিম ও মিষ্টিকুমড়া বীজ দিয়ে সহযোগিতা করেন। বাড়ির হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ও গরুর গোবর সার ব্যবহার করে চাষ বলে বাজারে তার সবজির বেশ কদরও রয়েছে। রাবেয়ার বাড়ি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তিনি নিজে ও তাঁর স্বামী কম্পোস্ট সার তৈরি করেন। রাবেয়ার স্বামী আহম্মেদ (৫৫) বলেন, “আমার বাড়িতে ৫টি গরু রয়েছে। গরুর গোবর থেকে আমি কম্পোস্ট সার তৈরি করি। এ বছর ৫০ মণ গোবর আমি বোরো মৌসুমে ধান চাষ ও ভুট্টার ক্ষেতে ব্যবহার করেছি। ফলে আমার একদিকে ফসল উৎপাদনে যেমন খরচ কম হচ্ছে অন্যদিকে জমির মাটির গুনাগুণ রক্ষা করতে পারছি।”
রাবেয়া গ্রামের মানুষকে জৈব উপায়ে শাকসবজি চাষ করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পাটগ্রামচর উত্তর পাড়া রাবেয়া, আরজিনা, শুকুরী, সুফিয়া ২০ জন নারী সদস্যকে একটি নারী সংগঠন তৈরি করতে চান। যার মধ্যে দিয়ে কৃষির বৈচিত্র্য রক্ষা করে এলাকাব্যাপী তাদের উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে চান। এই প্রসঙ্গে হরিরামপুর উপজেলা লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী মাসুম বলেন, “রাবেয়ার মত উদ্যোগী নারী প্রতিটি ঘরে ঘরে গড়ে উঠুক এবং তথ্য, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে কৃষিকে আরও সমৃদ্ধশালী করে একটি স্বনির্ভর কৃষি গড়ে উঠুক।”