একজন যমুনা রানীর স্বপ্ন

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

আধুনিক কৃষির প্রচলন, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং বাণিজ্যিক চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ বাংলাদেশের উপকূলীয় কৃষিপ্রতিবেশ যখন চরমভাবে বিপর্যস্ত, তখন পরিবেশের বিরূপ প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে উপকূলীয় কৃষি পরিবারগুলো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের খাপ খাইয়ে টিকে থাকার নিরন্তর প্রচেষ্ট অব্যাহত রেখেছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের যমুনা রানীর (৩০) প্রাণী সম্পদ তেমনই একটি কৃষি পরিবার। স্বামী ও এক সন্তানসহ তিন সদস্যের ছোট্ট সংসার তার। স্বামী মনিন্দ্র সরদার (৩৬) পেশায় দিনমজুর। ছেলে সুজন (৯) ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ালেখা করে।


২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বুড়িগোয়ালিনী গ্রামে ময়না সিএসও দলে যুক্ত হয়। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করে আসছে। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে ২টি ছাগল, ১টি কদবেল ও পেয়ারার চারা, কিছু বর্ষাকালীন বীজ ও দু’টি মুরগি সহযোগিতা পান। এরপর বারসিক এর নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি নিজের ছাগলগুলো পরিচর্যা ও কৃষি কাজগুলো চলমান রাখেন।


যমুনা রানীর পরিবার অন্যের ভিটায় বসবাস করতো। ২০০৯ সালে বুড়িগোয়ালিনী আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসের সুযোগ পান। সেখানে সরকারিভাবে পাওয়া মাত্র ৫ শতক জায়গাতে বছরব্যাপী লালশাক, ডাটাশাক, পালংশাক, সীম, বরবটি, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ঢেড়স, চালকুমড়া, টমেটো, ওল, কচুরমুখী, পুইশাক, ঝাল, আলু, ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মূলা, ইত্যাদি চাষাবাদ ও প্রাণীসম্পদ হিসেবে ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করেন।


বারসিক থেকে ২টি ছাগল পাওয়ার পর পরম মমতায় সেগুলো লালন-পালন করেন। ছাগলের জন্য মাচা সহকারে সুন্দর একটি ঘর বানিয়েছেন। নিজের হাতে সম্পদগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করেন। নিজের হাতে প্রাথমিক চিকিৎসাসহ দেখাশুনা করে ছাগলের বৃদ্ধিতে দায়িত্ব পালন করেন। মধ্যে মধ্যে টিকাও দেন। এখন ৪টি খাসি ছাগলসহ মোট ৮টি ছাগলের মালিক তিনি। এর মধ্যে ৪টি ছাগল বিক্রি করে তিনি একটি গরু কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। স্বামীর আয়ের পাশাপাশি নিজের আয় বৃদ্ধি করে সমাজে যমুনা রানী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এ বিষয়ে যমুনা রানী বলেন,“বারসিক থেকে আমাকে ২টি ছাগল সহযোগিতা দেওয়া হয়। তা থেকে আমার এখন ৮টি ছাগল হয়েছে। যার মধ্যে ৪টি খাসি ছাগল বিক্রি করে আমি একটি গরু কিনতে চাই।”
প্রাণীসম্পদ পালন করে যমুনা রানী যে স্বপ্ন দেখছেন এটা সকলের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। যমুনা রানীর উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

happy wheels 2

Comments