কৃষকদের মৌসুমি বীজ বপনের ব্যাতিক্রমি উৎসব

রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার

খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে সবুজায়নে কেউ নিয়ে এসেছেন জাম বীজ, কেউ বা আম আবার কেউ নিয়ে এসেছেন খেজুরের বীজ। উদ্দেশ্য নতুন করে কাটা খাড়ির দুই ধারে বীজগুলো বপন করে গাছে গাছে ভরে তুলবেন।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার ১০টি কৃষক ও যুব সংগঠনের সদস্যরা মিলে এ বীজ বপন উৎসবের আয়োজন করেন। গত মাস ছিলো ফলে ভরা মৌসুম সবার বাড়ীতে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ফলগুলো প্রায় প্রতিদিনই খাওয়া হয়েছে। সে বীজগুলো ফেলে না দিয়ে যার যার বাড়ীতে ভালোভাবে সংরক্ষণ করেছেন। উদ্দেশ্য বৃষ্টির পর সবার বীজগুলো এক জায়গায় করে সবাই মিলে এক সাথে কোন সরকারি পতিত জমি বা রাস্তার ধারে বপন করে দিবেন। রুক্ষ বরেন্দ্র গাছে গাছে ভরে তুলবেন।

এর আগে বরেন্দ্র অঞ্চললের কৃষক সংগঠন,যুব সংঠন ও নারী সংগঠনের যৌথ সভায় উদ্যোগটি নিয়ে আলোচনা করেন গোকুল-মোথুরা কৃষক সংগঠনের সভাপতি জিতেন্দ্রনাথ সূত্রধর। এরপর সবাই কাজটি নিয়ে আগ্রহী হয়ে বাড়ীতে বাড়ীতে বীজগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষন করতে শুরু করেন সংগঠনের সদস্যরা। বাংলাদেশ রির্সোস সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ(বারসিক) ও তানোর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটি মিলে এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করছেন। সবার সাথে যোগাযোগ করে বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের তদারকি করেন তানোর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক ধান বিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ। এ বিষয়ে তিনি বলেন“ আসলে এ সময় আমাদের এলাকার বড় বড় নিম, খেজুর গাছে প্রচুর ফল হয়। তা পেঁকে মাটিতে পরে থাকে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি সে বীজ গুলো গাছের তলা থেকে সংগ্রহ করে কোন পতিত জায়গায় বপন করব। সে মোতাবেক তালন্দর লবাইতলা নতুন করে কাট খাড়িতে বপন করব।’

দুবইল থেকে দেশি ধানের সংরক্ষক কৃষক মোঃ জায়দুর রহমান ৩ কেজি জাম ও ২ কেজি খেজুর বীজ নিয়ে এসে উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নিয়ে আসা বীজগুলোর মধ্য থেকে ১০টি গাছও যদি হয় তাহলেও আমাদের বীজ বিনিময় উৎসব সফল হবে। কারণ একটি গাছও আমাদের খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তানোরের অপর একটি গ্রাম হরিদেবপুর নারী সংগঠনের সভাপতি কবুলজান বেগম ৩কেজি কাঠাল, ২কেজি বন কাঁঠাল, ২কেজি তেঁতুল বীজ নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, “বাড়িতে বীজগুলো পরেই ছিলো আমি এ বীজ গুলো এ উৎসবে নিয়ে আসতে পেরে আনন্দিত কারণ এখন থেকে একটি গাছও যদি হয় তাও আমাদের এলাকার জন্য মঙ্গল হবে।

লবাইতলা ব্রীজ হতে খাড়ির দুইপাশের ২ কিলোমিটারে ২০ কেজি আম, ২৮ কেজি জাম, ১৬ কেজি নিম, ৫কেজি কাঠাল, ১৪কেজি খেজুর, ২কেজি লিচু, ৬কেজি তেঁতুল বীজ বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বপন করা হয়। উক্ত বীজ বপন উৎসবে উপস্থিত ছিলেন তানোর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ তানভির রেজা। তিনি বলেন, “কৃষকদের এমন উদ্যোগ বরেন্দ্র অঞ্চল সবুজায়নে সহযোগি হবে।’ তিনি অংশগ্রহণকারীদের নিজ বাড়ীর আশেপাশেও এমন উদ্যোগ নিতে আহব্বান জানান। অংশগ্রহণকারীরা রঙিন ফেস্টুনে বীজ বপনের উপকারিতা লিখে সবাইকে আগ্রহী হওয়ার আহব্বান জানান।

happy wheels 2

Comments