মানিকগঞ্জে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন
আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী বাচামারা ও চরকাটারী ইউনিয়নের জনপদের ৪টি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের ফলে প্রায় ৩ শত ৪৬টি বসত বাড়ি,কয়েক শত বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত সোমবার মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী বাচামারা ও চরকাটারী ইউনয়নে নদী পথে ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস.এম ফেরদৌস। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম রাজা,উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা শারমিন, উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আবুল, চরকাটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক মন্ডল,সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা দেখা গেছে, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের লোকজন নিয়ে নদীর পাড়ে অন্যে জায়গায় ঘর-দরজা,ধান-চাল, জিনিসপত্র, গবাদি পশু, নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। যমুনা নদীর ভাঙন ঠেকাতে কয়েক সপ্তাহ পূর্বে বাচামার এলাকায় মানিকগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪ হাজার বস্তা (জিও ব্যাগ) নদীর পাড় ঘেঁষে ফেলছে তা কোন কাজে আসেনি। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে ।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস.এম ফেরদৌস নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ইতিমধ্যে চরকাটারী ও বাচামারা ৭ মেট্টিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে সব সময় চিন্তা করেন। আগামীতে সরকার আরো বরাদ্দ দিবে নগদ অর্থ, চাল, ঢেউটিন যাই আসুক সবটুকু জিনিস ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সমানভাবে বিতরণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাচামারা ও চরকাটারী ৬/৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যে ভাঙন শুরু হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভাব নয়। এখানে ভাঙ্গন রোধে ও স্রোত ঠেকাতে বিকল্প প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
সরজমিন গত বুধবার কথা হয়, উপজেলার চরবারাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ সমেজ প্রামাণিক এর সাথে। গত ২ যুগে ৮ দফা ভাঙনের শিকার হয়েছেন। তার ৪০ বিঘা জমি ও ঘরবাড়ি ছিল। এখন কিছুই নেই, সবই যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। ইপিজেড এলাকায় কুলির কাজ করে চলে তার সংসার। চরকাটারী মন্ডল পাড়ার আবদুল খালেক মন্ডল এ প্রতিবেদককে জানান, নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়। এবার নিজের বাড়িতে থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। চরকাটারী বোর্ডঘর বাজার এলাকার আলমগীর হোসেন জানান, যমুনা নদীর ভাঙনে বাড়িঘর, জায়গা-জমি নদীতে বিলীন হওয়ায় গরু-ছাগল নিয়ে এখন অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে কোনোমতে থাকছেন।
চরকাটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক মন্ডল জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে কাঁঠালতুলী এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কাঁঠালতলী গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের চাল না দিয়ে বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে নগদ অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। এভাবে নদীর ভাঙন চলতে থাকলে চরকাটারী ইউনিয়নের অস্তিত্ব থাকবে না।