কৃষিজমি সুরক্ষায় নদীর বেড়িবাঁধ মজবুত করার দাবি

কৃষিজমি সুরক্ষায় নদীর বেড়িবাঁধ মজবুত করার দাবি

সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
“আমরা উপকূলীয় এলাকার মানুষ। প্রতিনিয়ত নানান ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা আমাদের টিকে থাকতে হয়। এ দুর্যোগ বছরের নানান সময় হয়ে থাকে। দুর্যোগের সাথে আমাদের সংগ্রাম। এ দুর্যোগের মধ্যে আমাদের নানান ধরনের কৌশল অবলম্বন করে টিকতে হচ্ছে। আমরা আয় রোজগার যা করি: যেমন দিনমজুরী দিয়ে, সুন্দরবনের সম্পদ সংগ্রহ করে, বসতভিটায় সবজি চাষ, ধান চাষ করে, ছোটখাটো ব্যবসা করে কোন রকমে আমরা টিকে আছি। দুর্যোগ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারলেও আমরা পারছিনা আমাদের বসতভিটা ও কৃষিজমি রক্ষা করতে। কারণ আমরা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ, ভূমিহীন, আশ্রয়ন জনগোষ্ঠী আমাদের অধিকাংশ পরিবার নদীকূলবর্তী স্থানে বসবাস এবং আমাদের নদীর যে বেড়িবাঁধ আছে সেগুলোর অবস্থা নাজুক! যার কারণে প্রতিবছর নদী ভাঙনের শিকার হতে হয়। এ নদী ভাঙনের কারণে যেমন কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে প্রাণ ও প্রকৃতি, নষ্ট হচ্ছে আমাদের বসত ঘরবাড়ি। এর জন্য আমাদের সব কিছুর আগে দরকার নদীর বেড়িবাঁধগুলো মজবুত করা। নদীর বেড়িবাঁধ যদি মজবুত থাকে তাহলে আমরা শত কষ্টের মধ্যে ভালো থাকবো।”


উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন বারসিক শ্যামনগর রিসোর্স সেন্টার কার্যালয়ে বারসিক’র সহায়তায় ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে গতকাল আয়োজিত কৃষিজমি সুরক্ষায় আদিবাসী ও সামাজিকভাবে প্রান্তিক মানুষের দাবি’ শীর্ষক সভায় অংশগ্রহণকারী পেশাজীবী জনগোষ্ঠী।


সভায় বুড়িগোয়ালিনী আশ্রয়ন জনগোষ্ঠীর আদিবাসী, কাহার, জেলে, ঋষি, সরদার, বিলআটি, মাজেরআটি ও কলবাড়ি গ্রামের কৃষক এবং দাতিনাখালী গ্রামের বনজীবীরা অংশগ্রহণ করেন। সভায় অংশগ্রহণকারীদের নিকট উপকূলীয় এলাকায় কি কারণে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে এবং কৃষিজমি সুরক্ষায় কি করা যেতে পারে তা জানার চেষ্টা করা হয়।


সভায় অংশগ্রহনকারী জগদীশ মুন্ডা, “আদিতে উপকূলীয় এলাকায় জনবসতি তৈরিতে আবাদ শুরু হয় আমাদের আদিবাসীদের হাত ধরে। আর এখন আমরা ভূমিহীন! আমাদের নিজস্ব কোন জমি-জমা নেই। আমরা চাই উপকূলীয় এলাকায় যত খাস জমি আছে সেগুলো সঠিক ভূমিহীন নির্বাচন করে আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী মাঝে সুষ্ঠুভাবে বন্ঠন করা হোক।”


সভায় অংশগ্রহণকারীরা আরো জানান, “আমাদের কৃষি জমি বর্তমান সময়ে নানানভাবে কমে যাচ্ছে। আগের মতো যেমন আর কৃষিজমি নেই তেমনিভাবে বসতভিটাও নদীর মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’ কৃষিজমি কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে তারা আরো মনে করেন যে, নদী ভাঙন, দুর্বল বেড়িবাঁধ, রাস্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাল ভরাট, ব্যক্তি মালিকানায় প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো লিজ গ্রহণ, লবণাক্ততা, চিংড়ি ঘেরের আউট ড্রেন না থাকা, কর্মসংস্থানের অভাব, জনসংখ্যাবৃদ্ধি, চিংড়ি ঘেরের প্রভাব বিস্তার ইত্যাদি।”


কৃষিজমি সুরক্ষার জন্য অংশগ্রহণকারীরা কিছু দাবি তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো: নদীর বাঁধগুলো মজবুত করা, চিংড়ি ঘেরের জন্য রাস্তায় ওভারপাইপ স্থাপন বন্ধ, যত্রতত্র রাস্তায় স্লুইজ গেট স্থাপন না করা, আলাদা ধান ও মাছ চাষের যোন ঠিক করা, খাল খনন এবং লিজমুক্ত করা, চিংড়ি ঘেরের আউট ড্রেন নিশ্চিৎ করা, নদীর চরে বনায়ন, পুকুর খনন, সঠিক ভূমিহীনদের তালিকা প্রণয়ন ও ভূমি সহায়তা ইত্যাদি।

happy wheels 2

Comments