সাম্প্রতিক পোস্ট

পাড়া মেলায় প্রাণের জোয়ার

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল:
প্রকৃতির নানা প্রজাতির গাছ-গাছড়া, শাক, লতা, গুল্ম, ফল, মূল ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হল অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলা। গত ১৪ নভেম্বর ২০১৭ তারিখ বিকালে গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামে ফরিদা বেগমের উঠানে পাড়া মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পাড়া মেলায় স্থানীয় এলাকার ১৮ জন নারী, পুরুষ, যুব, শিক্ষার্থী ও কবিরাজ এই মেলায় কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত এবং ঔষধি উদ্ভিদবৈচিত্র্য নিয়ে ১৮টি আলাদা আলাদা স্টল প্রদর্শন করেন। প্রতিটি উদ্ভিদ প্রজাতি বৈচিত্র্যের নাম এবং গুণাগুণ বা কি কাজে ব্যবহৃত হয় তা কাগজে লিখে রাখেন; যাতে করে প্রতিটি বৈচিত্র্য সম্পর্কে মেলায় আগত সকল দর্শনার্থী জানতে পারে।

পাড়া মেলায় প্রাণের জোয়ার (1)আগাছা বলে কোন কিছু নেই। হয় সেটা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়; নয়তো সেটা ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর এই সকল নানা প্রজাতির উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের গুণাগুণ জানানো, এটার সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণই পাড়া মেলার মূল উদ্দেশ্য। বারসিক এর সহযোগিতায় চকবারা মানব কল্যাণ জেলে-বাওয়ালী আই. এফ. এম. কৃষক সংগঠনের আয়োজনে সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উক্ত পাড়া মেলায় প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। বিচারক মন্ডলীর বিবেচনায় উক্ত পাড়া মেলায় ৬৩ রকমের উদ্ভিদ প্রজাতি বৈচিত্র্য প্রদর্শন করে ১ম স্থান অধিকার করেছেন সাবিকুন্নাহার মীম, ২য় হয়েছেন সাহিদা খাতুন এবং হালিমা খাতুন ৩য় স্থান অধিকার করেন। বিজয়ী তিনজন ছাড়াও সকল প্রতিযোগিকে অংশগ্রহণমূলক পুরস্কার প্রদান করা হয়।

পাড়া মেলায় প্রাণের জোয়ার (2)মেলায় মায়ের সাথে একটি স্টল দিয়ে সাত বছরের শিশু মিম মাইক্রোফোন ধরে সকলের উদ্দেশ্যে জানালেন, “থানকুনি শাক উপকারী বাড়ীতে আমরা রান্না করে খাই। কেওড়া খাটা রান্না করে খাই।” এমনই গ্রামীণ এক উৎসবমুখর পরিবেশে কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত এবং ঔষধি উদ্ভিদবৈচিত্র্য সনাক্তকরণ, শ্রেণীকরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার ও বিকাশের জন্য আয়োজিত পাড়া মেলায় অনন্তমূল, অপরাজিতা, ঈষাণমূল, লালকেউটে, কালকেউটে, শিউলি, সোনাঝুরি, কৃষ্ণ তুলসী, রাধা তুলসী, মাধবীলতা, যাঁতিফুল, শিষ আকন্দ, শ্বেত আকন্দ, বাউফুল, কানফুল, ঝাউগাছ, চিরবসন্ত, পাথরকুচি, দূর্বাঘাস, মেহেদী, ধুতরা, গাদাফুল, আদাবরুন (বিলশাক), তেলাকচু, ঘুমশাক, কলমীশাক, গাদামনি শাক, হেলাঞ্চ, মাটিফোড়া শাক, খুদকুড়ো, হাতিশূর, সেঞ্চি শাক, ঘোড়া সেঞ্চি, কাটানটি, গিমে শাক, থানকুনি এবং কালকচুসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদবৈচিত্র্য প্রদর্শনী হয়।

পাড়া মেলায় প্রাণের জোয়ার (4)কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত এবং ঔষধি উদ্ভিদবৈচিত্র্য সনাক্তকরণ, শ্রেণীকরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার ও বিকাশের জন্য নতুন প্রজন্মের সাথে পরিচিতি বাড়ানোর জন্য পাড়া মেলা গুরুত্বপূর্র্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট্ সকলেই মতামত প্রকাশ করেন।

happy wheels 2

Comments