প্রাণ ও প্রকৃতির বৈচিত্র্য সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে
হরিরামপুর,মানিকঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
“দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলের জাতবৈচিত্র্য, মানুষ বাজারে উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আগে পরাঙ্গি, কালামানিক, হাসাকুমাড়িয়া ধানগুলো চাষ হত অনেক। রবি শস্য হিসেবে গম কালাই, তিল, তিসি, কাউন ও পায়রা চাষ করে পায়রার ছাতু খেতাম। বাড়ির আনাচে কানাচে অনেক শাকসবজি ছিল যা সহজে পাওয়া যেত টাকা খরচ করে কিনতে হত না।”
উপরোক্ত কথাগুলো বলেছে পাটগ্রাম চরের প্রবীণ কৃষক নুরু মিয়া (৬২)। সম্প্রতি শিশু কিশোর নারী-পুরুষ, প্রবীণ সকল পেশা বয়সের ৫০ জন মানুষের সমন্বিত উদ্যোগে পাটগ্রামচরে উত্তর পাড়া মনোয়ার হোসেনের বাড়িতে “প্রাণবৈচিত্র্য, আন্তঃসম্পর্ক ও বহুত্ববাদী সমাজ” বিষয়ে আলোচনার সময় তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনায় উঠে আসে একটা সমাজে সকল ধরনের পেশার মানুষ যেমন, কামার-কুমার, জেলে, কৃষক, তাতী বাস করেন। এছাড়া মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাণ যেমন মাছ, নদী, পানি, পাখি, গাছপালা বিষয়টিও উঠে। আলোচনায় বক্তারা মানুষের কল্যাণের জন্য এসব প্রাণ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করা জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
বক্তারা জানান, প্রতিটি প্রাণ ও প্রকৃতির উপাদান একে অপরের উপর নির্ভরশীল। একটি ছাড়া অন্যটি চলতে পারে না। তাই চরের যেসব বৈচিত্র্যময় প্রাণ ও প্রকৃতি রয়েছে সেগুলো সুরক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এজন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে বলে তা মনে করেন।
চরের বিভিন্ন সমস্যাগুলো নিয়েও আলোচনা হয়। আলোচকগণ প্রতিবছর বন্যার কারণে তাদের ফসল নষ্ট হওয়ার কথা জানান, বীজ রাখতে না পারার কথা জানান, আউশ ধানের চাষ কমে যাওয়ার কথা জানান। জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা জানান।
এ সমস্যা মোকাবিলায় স্থায়িত্বশীল কৃষি চর্চাসহ বিভিন্ন প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন। কৃষকদের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চরের বিভিন্ন সমস্যাগুলো সমাধান করা যাবে। এছাড়া ফসলের বীজের সহজলভ্যতার জন্য দেশীয় ফসল আবাদ, বীজ সংরক্ষণ ও বিনিময় করা উচিত, দেশীয় খাল বিলের মাছ, পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীকূল রক্ষায় নিজেরা সচেষ্ট হওয়া এবং এলাকার বৈচিত্র্যকে সুরক্ষা করার স্ব স্ব অবস্থান থেকে উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় আলোচনা সভায়।