সাম্প্রতিক পোস্ট

বরেন্দ্রর রুক্ষ মাটিতে অভিযোজন উদ্যোগ

বরেন্দ্রর রুক্ষ মাটিতে অভিযোজন উদ্যোগ

রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার

বরেন্দ্র তথা রাজশাহী অঞ্চলের তানোর উপজেলার মন্ডুমালা, বাধাইর এলাকাটি সব থেকে বেশি খরাপ্রবণ। মাঠ ফসলের পাশাপাশি উদ্যোন ফসল চাষেও এই খরা প্রবলভাবে সমস্যা তৈরি করে। একদিকে প্রাকৃতিকভাবে খরা অপরদিকে এই অঞ্চলের মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণে ফসল চাষ কঠিন। মাটিতে পানি ধারণ ক্ষমতা যেমন কম তেমন কম জৈব পদার্থের পরিমাণ। মাটিতে পানি দিলে দ্রুত নরম হয়ে যায় এবং পানি না থাকলে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। শুকনো মাটিতে যন্ত্রচালিত চাষ ব্যবস্থা না হলে চাষ করা সম্ভব হয় না। শুকনো মাটিতে গরু দিয়ে হাল চাষও কঠিন। এই এলাকার মাটিতে জৈব পদার্থ কম ও সবজি চাষে ন্যূনতম পানি ব্যবহার করে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষের ক্ষেত্রে কৃষক-কৃষাণীরা নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। কখনও কলসী দিয়ে সেচ ব্যবস্থা, কখনও দৈনন্দিন ব্যবহারের পানি সংরক্ষণ করে সেচ কাজে ব্যবহার। আবার বর্তমানে বস্তা ও পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের বোতল কেটে তার মধ্যে মাটি দিয়ে সবজি গাছ রোপণ করেন অনেকে। নিয়মিত চলতে থাকে বসতবাড়িতে সবজি চাষের এধনের পদ্ধতির প্রয়োগ।

উদ্যোগ গুলোর উপকারিতা
মন্ডুমালা এলাকার জগদিশপুর গ্রামের কৃষানী মোসা: সারমিন আক্তার (৪২) তাঁর বাড়ির পড়ে থাকো জায়গায় বস্তায় ও প্লাস্টিকের পরিত্যাক্ত বোতলে বেগুন, মরিচ, লাউ গাছ রোপণ করেছেন। গাছগুলো যতœ পেয়ে ভালো হয়েছে। তার উঠানের মাটি অত্যন্ত শক্ত ও শুকনো হওয়ায় তিনি এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সবজি গাছ রোপণ করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “বস্তায় সবজি চাষের ক্ষেত্রে এর পরিচর্যা করা সহজ। মাটি ও গোবর সার মিশ্রণ করে বস্তায় ভরে বীজ রোপণ করলেই কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যায়। পানি সেচ দিতে হয় কম। পানির অপচয় কম হয়। কারণ আমাদের এলাকায় পানি সমস্যা সব থেকে বড় সমস্যা।’ একই গ্রামের অপর একজন কৃষাণী শান্তিনা মার্ডি(৩৮) বলেন, “আমাদের এলাকার মাটিতে শক্তি নাই; বস্তা বা পরিত্যাক্ত বোতলে যদি পচা গোবর আর পুকুরের মাটি নিয়ে তার মধ্যে বীজ বা চারা রোপণ করি তাহলে ভালো হয়। অল্প যতেœ গাছ ভালো হয়। গাছ যখন ছোট থাকে প্রচন্ড রোদে সবজি গাছের চারা সহ বস্তা সরিয়ে ছায়া জায়গায় রেখে দেওয়া যায়। গাছ বড় হলে রোদে তেমন সমস্যা হয় না।

পাশের তেলোপাড়া গ্রামে ঘুরে দেখা গেল, ২০২০ সালে বারসিক থেকে দেওয়া কাঁঠল গাছটি খুবই যতœ করে রোপণ করা হয়েছে। পানি সেচের সুবিধার জন্য মাটি দিয়ে চারিদিকে আইল করে লেপে দেওয়া হয়েছে। গাছে প্রতিদিন পানি দেওয়ার ফলে জায়গাটি ভেজা থাকে সেখানে বাড়ির গৃহিনী শ্যামলী রানী (৩৯) লালশাক বীজ বপন করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “যেহেতেু গাছের গোঁড়ায় প্রতিদিন পানি দেওয়া হয় আবার মাটিও ভালো। তাই লালশাক বপন করেছি অল্প খরচে। আমি এখান থেকে বিষমুক্ত নিরাপদ লালশাক পাবো।”

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন এই এলাকায় পানি সংকট প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। কৃষকরা তাই নিজ জ্ঞান ও অভিজ্ঞাতা দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে ফসল ফলানোর। কৃষক কৃষাণীদের এই ছোট ছোট কাজগুলোই জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন করে যাচ্ছেন।

happy wheels 2

Comments