নগর দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি
বারসিকনিউজ ডেক্স
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ) এবং বারসিক আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়রদের কাছে নগর দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য ১২টি দাবি উত্থাপন করেছে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/01/83009270_10220538773967022_3693547479422205952_n-1.jpg)
আজ (২৩ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত এই জনসংলাপে বস্তিবাসী নেতা কুলসুম বেগম বলেন, ‘আমাদের জন্য প্রথমে বাসস্থান ও কর্মসংস্থান দরকার। আমরা এমন মেয়র চাই যিনি বস্তিবাসী গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়াবেন, আমাদের দাবি পূরণে সহযোগিতা করবেন।’ পথবাসী শিশুদের প্রতিনিধি বৃষ্টি আক্তার সিটি কর্পোরেশনের কাছে নিরাপদে চলাচল ও আশ্রয়ের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারসিকের নগর গবেষক জাহাঙ্গীর আলম। বারসিকের ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় এবং পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবাশীষ কুমার কুন্ডু, কাপের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সান-ইয়াট, প্রকৌশলী আবদুস সোবহান, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, নগর দারিদ্র উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আক্তার, বস্তিবাসী অধিকার সুরক্ষা কমিটির হারুন-অর-রশিদ, চাঁদউদ্যান বস্তির শ্রমিক নেতা নূরুজ্জামান, মোহাম্মদপুর পাইওনিয়ার বস্তির আয়েশা বেগম, গৃহভিত্তিক শ্রমিক সংগঠনের লাইজু আক্তার, পবার সাবিনা নাঈম, বারসিকের সুদিপ্তা কর্মকার, গোপাল কুমার দাস ও পাভেল পার্থ।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/01/83475641_10220538774247029_5088558367606046720_n.jpg)
বক্তারা বলেন, ‘নগরের এই দরিদ্র মানুষেরা এদেশের নাগরিক, সামাজিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোন উপায় না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে। তাছাড়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা নগরের নিম্ন আয়ের বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের আবাসনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বক্তারা আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে নিম্নোক্ত দাবি তুলে ধরেন:
১. শক্তিশালী নগর সরকার দিতে হবে এবং নগর সরকারের মাধ্যমে নগর দরিদ্র মানুষদের সব সেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি কাউন্সিলর অফিসে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সকল মানুষের সব ধরনের সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
২. নগরে বসবাসরত সকল নিম্ন আয়ের মানুষ, বিশেষ করে অসহায় নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং প্রবীণ মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৩. গ্রাম ও শহরের মধ্যে সমতার ভিত্তিতে সামাজিক নিরাত্তা বেষ্টনী বা কর্মসূচী চালু করতে হবে এবং বাস্তবভিত্তিক ভাতা নির্ধারণ করতে হবে।
৪. শহরের দরিদ্র মানুষের জন্য সমাজ সেবা, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সকল ধরনের কর্মসূচী চালু করতে হবে।
৫. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে অন্ত:ভূক্তির প্রক্রিয়াকে সহজ বোধ্য করতে হবে।
৬. জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানার সমস্যার কারণে অনেকেই এই সেবার আওতায় আসতে পারেন না। জাতীয় পরিচয়পত্রে যে ঠিকানাই থাকুক না কেন নগরে অবস্থানের কারণে নাগরিক সুবিধাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সাথে তাদেরকে যুক্ত করতে হবে এবং নগরের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে।
৭. দারিদ্র্যের হার কমানোর জন্য নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যয়ের প্রধান খাতসমূহ যেমন রোগ বা অসুখ বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং পানি, বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ন্যায় সংগত ব্যবস্থা করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একটি নতুন পরিচয়পত্র প্রদান করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. সমাজ সেবা, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সমাজ কল্যাণ, ওয়াসা, জ¦ালানী মন্ত্রণালয়ের সেবা আরো সহজভাবে বস্তিবাসীদের জন্য নিশ্চিত করতে মেয়রকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৯. নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের জন্য কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. নিম্ন আয়ের বস্তিবাসীদের জন্য সহজভাবে ব্যাংক একাউন্ট করার ব্যবস্থা মেয়রকে করতে হবে।
১১. বয়স্ক ভাতা, দারিদ্র মায়েদের খাতা, বিধবা ভাতা, মাত্বকালীন ভাতাসহ যে সব ভাতা রয়েছে তার প্রচার আরো বাড়াতে হবে এবং বস্তির মধ্যে সেবার নামসহ সিটিজেন চার্টার তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. বস্তিবাসীদের জন্য স্কুল ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি। এটা কমানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মেয়রকে পদক্ষেপ নিতে হবে।