রং পেন্সিলের আঁচড়ে এঁকেছে জলবায়ু সংকট আর সমস্যার কথা

রং পেন্সিলের আঁচড়ে এঁকেছে জলবায়ু সংকট আর সমস্যার কথা

রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
ছবি আঁকিয়ে নিজেদের মনের কথা তুলে ধরলেন নগরের প্রান্তিক শিশুরা। খরায় পুড়ছে জমির ধান, জমিতে বসে কৃষকের মাথায় হাত। নিজেদের বাড়ি ঘর তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে, অতিরিক্ত দালান কোঠা বৃক্ষ নিধনের ফলে গরম বেশি, ঝরে গাছ ভেঙ্গে যাচ্ছে, দেশের ছবি, ভালোলাগার ছবি। এরকম অসংখ্যা ছবি আঁকে রাজশাহীর শিশুরা। জলবায়ু ও আবহাওয়া পরিবর্তনে, অধিক গরম, রোদে, তাপে তাদের কি কি মনে হচ্ছে এ বিষয়ে ছবি আঁকতে বলা হয়। তাদের রং তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠে জীবনের গল্প।

রাজশাহী নগরের মতিহার থানার ফুলতলা এরাকার তৃতীয় শেণীর রুকাইয়া রুকু (১০) নিজের রং পেন্সিল দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের খরার চিত্র। অত্যাধিক খরার কারণে কৃষকের জমির আবাদ নষ্ট হয়েছে, কৃষকের মাথায় হাত, জিম ফেটে গেছে এমন চিত্র সে এঁকেছে। একই পাড়ার দ্বিতীয় শ্রেণীর সিনথিয়া (৮) রং পেন্সিলে একেছেন খরার কারণে গাছ মরে যাচ্ছে। চতুর্থ শ্রেণীর ইয়াসিন আলী (১২) নগরে দালান কোঠা আর একটি ছোট্ট জায়গায় বেড়ে উঠা বৃক্ষের চেষ্টা। ছোট শিশুদের মনের কথা, জীবনের কথা, ভালো লাগার কথা ছবির মাধ্যমে আঁকতে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনটি করেন বরেন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠন ছোট্ট স্বপ্ন। এতে সহযোগীতা করেন উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক।

কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের দেয়া নাম এই ছোট্ট স্পপ্ন যুব শিক্ষার্থী সংগঠনটি রাজশাহী শহরের ফুলতলা এলাকায় প্রান্তিক শিশুদের নিয়ে লিখা পাড়া শেখান। প্রান্তিক শিশুদের নিয়মিত স্কুলগামী করানোসহ প্রতি ছুটির দিনে (শুক্র শনিবার) তারা এই শিশুদের একসাথে ফ্রি লিখা পাড়া শেখান। একই সাথে তারা এই শিশুদের বিভিন্ন পরিবেশ শিক্ষাসহ নৈতিক শিক্ষার দিকগুলোরও উন্নয়ন করতে সহায়তা করেন। এরই অংশ হিসেবে ছোট্ট স্বপ্œের স্বেচ্ছাসেবী যুবকরা পরিবেশ শিক্ষার অংশ হিসেবে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। যার মূল থিম ছিলো এই সময়ে কেমন আছি, রোদ, গরম, পানি এবং বর্তমান অবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের আঁকতে বলা হয় ইচ্ছেমত।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছোট্ট স্বপ্ন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে আমরা কাজ করছি। এই সংগঠনটির নাম দিয়েছিলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। সেসময় তিনি আমাদেরকে স্বেচ্ছাসেবী কাজগুলো করতে অনুপ্রেরণা দিতেন। সেই থেকে আমরা আজো এই সংগঠনটি পরিচালনা করে আসছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বস্তির শিশুদের শিক্ষা উপকরণ, বিভিন্ন দুর্যোগের সময় আমরা প্রান্তিক মানুষদের সাহয়তা করে থাকি। একই সাথে পরিবেশ শিক্ষা এবং মননশীল প্রজন্ম তৈরিতে আমরা কাজ করছি।’

বরেন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টার ডিসিপ্লিনারি রিসার্স এর সহকারী অধ্যাপক ড. সুলতানা রাজিয়া ছোট্ট স্বপ্ন উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য সচিব। তাঁর দিক নির্দেশনায় সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা অনেক ভালো কাজ করছেন।

happy wheels 2

Comments