ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলায় বিজয় দিবস উদযাপন
সাতক্ষীরা থেকে চম্পা মল্লিক
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সুন্দরবন সংলগ্নএকটি গ্রাম দাঁতিনাখালী। গ্রামটির বেশিরভাগ মানুষ সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। এলাকার অধিকাংশ মানুষ সুন্দরবনের বিভিন্ন সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এলাকার নারীদের আয়বর্ধনমূলক কোন কাজের সুযোগ না থাকায় সাধারণত বাড়িতে গৃহস্থালীর কাজ করেন।
তবে এলাকায় কিছু উদ্যোগী নারী তাদের অবস্থার উন্নয়নের জন্য গড়ে তোলেন একটি সংগঠন, যার নাম দাঁতিনাখালী বনজীবী নারী উন্নয়ন সংগঠন। সংগঠনটি প্রথম থেকেই সঞ্চয় কার্যক্রমের পাশাপাশি আয়বর্ধনমূলক কিছু কাজ করে থাকে। এই সংগঠনটিতে “বাদাবন সম্ভার ব্রান্ড” নামে কিছু পণ্য তৈরি করা হয় এবং বাজারজাতও করা হয়। কাঠ বহির্ভুত বনজ সম্পদ (মধু, মোম, কেওড়ার আচার, জলপাইয়ের আচার, অম্বল মধুর আচার ও হাতে কাজ করা) বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করা হয়। সংগঠনের সদস্যদের সকলের মিলিত সিদ্ধান্তে এ সকল কাজগুলো নারীরা খুব যত্নসহকারে করে থাকেন। উন্নয়নমূলক কাজ ছাড়া ও এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টি এবং পুরানো ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বিগত বছরের ন্যায় তারা গত ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী দাঁতিনাখালী বনজীবী নারী সংগঠন সংলগ্ন মাঠে এলাকার ঐতিহ্যপূর্ণ খেলাধুলার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ৭নং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু ভবতোষ কুমার মন্ডল এবং সংস্লিষ্ট ইউপি সদস্য মো. কামরুজ্জামান। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, শিক্ষক, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, বারসিক কর্মকর্তাসহ এলাকার বিভিন্ন বয়সের শতাধিক নারী-পুরুষ।
অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতামূলকভাবে সাঁতার কাটা, বালিশ ছোড়া, চেয়ার সিটিং, চামচ মার্বেল, কাছি টানা, বেলুন ফাটানো, হাঁড়ি ভাঙ্গা, সুই সুতাসহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন করেন। সকল শ্রেণীর ও সকল পেশার নারী ও পুরুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে খেলাগুলোতে অংশগ্রহণ করেন। এই এলাকার নারীরা, যারা কেবলমাত্র সংসার সিমানায় আবদ্ধ, তারাও বেরিয়ে এসেছিলেন বাইরে এবং দীর্ঘদিনের জড়তা কাটিয়ে যোগদান করেছেন খেলাগুলোতে।
প্রতিবছরই অনুষ্ঠানটি উদযাপন করার ফলে শুধু দাঁতিনাখালী এলাকা নয়, পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোর মানুষের মাঝে ও ব্যাপক সাড়া ফেলতে সমর্থ হয়েছে। যে সকল প্রবীণ নারী ও পুরুষ, প্রতিবন্ধী খেলাতে যোগদান করতে পারেননি অসুস্থতার কারণে, তাদের মধ্যে অনেকেই খেলা দেখার পাশাপাশি তাদের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভেবেছেন। এই অনুষ্ঠানটি সকলের মনকে আকৃষ্ট করেছে। সংগঠনটির এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এলাকার হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এমনটা আশা করা যায়। এভাবে টিকে থাকবে লোকায়ত সংস্কৃতি।