কমিউনিটি বীজ ব্যাংকের ধানবীজ বিতরণ
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
বারসিক কলমাকান্দা উপজেলায় ২০১২ সাল থেকে কৃষক নেতৃত্বে ধানজাত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ ধানজাত গবেষণার মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠী এলাকা উপযোগী ধানজাত, আগাম, খরা বা পানি সহনশীল, বাতাসে নুয়ে পড়ে না, গাছের গঠন শক্ত, ফলন ভালো, পোকার আক্রমণ কম, খেতে সুস্বাদু প্রভৃতি বিষয়বস্তু নিজেরাই পর্যবেক্ষণ করে জাত নির্বাচন করেন। যেহেতু ধানজাত গবেষণা কার্যক্রম কৃষকের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বে ও অংশগ্রহণে পরিচালিত হয়। তাই এসব ধানজাত সম্পর্কে ভালো ধারণা লাভের পাশপাশি সর্বোচ্চ মানের ধানজাত বাছাই করার একটা সুযোগ তৈরি করে দেয় গবেষণাটি। যার ফলে কৃষকেরা পছন্দমত ধানজাত নির্বাচন করেন। প্রতিবছর ধানজাত গবেষণা প্লটের মাধ্যমে কৃষকেরা স্থানীয় ধানজাত সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার তারানগর কমিউনিটি বীজ ব্যাংক ও ভেলুয়াতলী গ্রামের আব্দুল মোতালেব এর কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্র থেকে মোট ১৪ জনকে আমন মৌসুমের ১৬ জাতের ধানবীজ বিতরণ করা হয় (বাদশাভোগ, তুলশীমালা, দুধবিন্নী, গুটিস্বর্ণা, চিনিগুড়া, পর্বতজিরা, কার্তিক বিন্নী, কালোজিরা, মালশিরা, কাবুনদোলান, বিশালী বিন্নী, বিকল্প, লোহাজং, গারো আইজং, জেসমিন ও বিরই)।
২০২৩ সালের আমন মৌসুমে কলমাকান্দা উপজেলায় ২টি স্থানে কৃষক নেতৃত্বে ধানজাত গবেষণা প্লট করা হয়েছিল। কৃষক নেতৃত্বে ধানজাত গবেষণার মাঠ দিবসে এলাকার আগ্রহী কৃষকেরা গবেষণা প্লট পরির্দশন, মাড়াই-ঝাড়াই করার পর যে ধানজাতগুলি নির্বাচন করেছিলেন। সেসব ধানজাতগুলো আগ্রহী কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে কমিউনিটি বীজ ব্যাংক থেকে। তবে শর্ত থাকে, যেসব ধানজাত যে পরিমাণে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে সেসব ধানবীজ থেকে ফসল ফলিয়ে সে পরিমাণে কমিউনিটি বীজ ব্যাংকে ফেরত দিতে হবে। যাতে পরবর্তী মৌসুমে আরো অন্যান্য আগ্রহী কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
এই প্রসঙ্গে বীরমুক্তিযোদ্ধা বদিন জাম্বিল বলেন, ‘আমাদের সময়ে বিভিন্ন ধরণের ধানজাত রোপণ করা হতো, যে ধানজাতগুলো তেমন যত্œ করতে হতো না, খেতেও অনেক সুস্বাদু ছিল, এখন সেসব ধান আর দেখি না, তবে বারসিক এর বীজ বিতরণ প্রোগ্রামে এসে আবারো অনেক পুরনো ধানজাত দেখতে পেলাম।’ সাবিনা রংদী বলেন, ‘আমরা মিকরাকা নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি কমিউনিটি বীজ ব্যাংক পরিচালনা করছি, এ বীজ ব্যাংক থেকে প্রতিবছর অনেক বীজ সহযোগিতা করি কৃষকদের মাঝে, যখন বীজ সংগ্রহের সময় হয় তখন আমরা গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে এসব বীজ সংগ্রহ করি, আবার মৌসুমের শুরুতে এসব বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করি।’ জনীন্দ্র নকরেক বলেন, ‘বীজই কৃষকের প্রাণ অথচ আমরা এখন বীজ রাখি না, বাজার থেকে বেশিরভাগ বীজ সংগ্রহ করি, যার কারণে অনেক সময় আমরা বীজ কিনে প্রতারিত হই, আমাদের এই কমিউনিটি বীজ ব্যাংক তৈরি করার পর থেকে আমরা খুব সহজে এখান থেকে বীজ সংগ্রহ করতে পারি।’
স্থানীয় ধানজাতের সাংস্কৃতিক তুলে ধরে মথি ঘাগ্রা বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ আদি ধানজাতগুলো সংরক্ষণ করা। কারণ এসব আদি ধানজাতগুলো আমাদের সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। এসব ধানজাতগুলো বিলুপ্তির সাথে সাথে আমাদের সংস্কৃতিও বিলুপ্তি ঘটবে। কিছু ধান আছে যে আমাদের সংস্কৃতিকে বহন করে কিন্তু বর্তমানের যেসব ধানজাতগুলো আছে তা আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির কোন পরিচয় বহন করে না, শুধু আবাদ করছি ভাত খেতে হয় খাচ্ছি এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।’