প্রযুক্তির ভালো দিকটি নিয়ে নিজেদের জীবনে কাজে লাগানো উচিত
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে রিনা আক্তার
মহামারী করোনাকালীন সময়ে বিশে^র প্রতিটি মানুষ ছিল ঘরবন্দী। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সব কিছু বন্ধ ছিল, মানুষের জীবন হয়েছিল খাঁচায় বন্দী পাখির মতো। কিন্তু এই করোনাকালীন সময়েও অনেকে ঘরে বসে বিভিন্ন আয়মুলক কাজ করে একদিকে যেমন অবসর সময় পার করছেন অপরদিকে অর্থও উপার্জিত হয়েছে। এমনি একজন কিশোরী আফসানা আক্তার (১৬)।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড আজিমপুর গ্রামের মেয়ে আফসানা আক্তার (১৬) সিংগাইর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ব্যবসায় বিভাগ এর ছাত্রী। সেই সাথে সে আলোর দিশারী কিশোরী ক্লাবের সভাপতি আর তার আরেকটি পরিচয় সে একজন উদ্যোক্তা। তার বাবার নাম মো: রিপন আহমেদ (৪৫)। তিনি পেশায় গ্রীল ওয়াল্ডার, তার মায়ের নাম রিক্তা আক্তার। (৪০) তিনি একজন গৃহিনী। তারা তিন ভাইবোন, দুই বোন এক ভাই। পরিবারের বড় সন্তান সে ।
করোনাকালীন সময়ে যখন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল তখন আফছানার অবসর সময় কাটছিল এমন সময় সে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে যে অবসর সময়ে সকলেই অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচা করছে তখন তার মনে খেয়াল আসে যদি সে এমনভাবে কাজ করতে পারে তাহলে তার অবসর সময়ও কাটবে অন্যদিকে কিছু অর্থ উপার্জিত হবে। সে ইউটিউব, গুগল প্রভৃতি মাধ্যম থেকে কাজসমূহ দেখতে থাকে। তখন সে তার নিজের নামে একটি ফেসবুক পেইজ খুলে। সেই সময় মাস্কের অনেক চাহিদা থাকায় প্রথমে সে অল্প কিছু মাস্ক তৈরি করে এবং অনলাইনে কাপড় প্রিন্ট করার নিয়ম দেখে মাস্কগুলো ফ্যাব্রিক, একরামিন, তুলির আলতো ছোঁয়ায় সুন্দর সুন্দর ডিজাইন করে সেগুলো যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে।
প্রথমদিকে তার বন্ধুরাই সেগুলো ক্রয় করে কিন্তু কয়েকদিন পর তার এই মাস্কের চাহিদা আরো বেড়ে যায়। সে ১০ টাকা পিচ মাস্ক কিনে সেগুলো প্রিন্ট করার পর একেকটি মাস্ক ২০-৩০ টাকা করে বিক্রি করে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সে সিদ্ধান্ত নেয় তার কিশোরী ক্লাবের অনেক কিশোরী আছে যারা অবসর দিন পার করছে তাদেরকে এই অনলাইনের সেলের কথা বললে তারাও রাজি হয়ে যায়। আর কয়েকজন তার কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়। মাস্ক বিক্রয় এর পর সে দেখে অনলাইনে বিভিন্ন হ্যান্ডপ্রিন্টের কাপলসেট বিক্রয় হচ্ছে আর সেগুলো দেখতেও দারুণ। তখন সে শাড়ি, পাঞ্জাবী হ্যান্ডপ্রিন্ট করা শুরু করে সেগুলো ফেসবুকপেজ এ আপলোড করে এবং তার প্রিন্টের যথেষ্ট কদর বেড়ে যায়। তখন কিশোরী ক্লাবের বাকিদেরও তার সাথে মিলিত হয়ে কাজ করতে বললে তারাও ইউটিউব থেকে দেখে কাজ শুরু করে আনন্দ ও আগ্রহের সাথে।
এখন সে হ্যান্ডপ্রিন্টের সাথে সাথে তার নিজের নামে আরো একটি পেইজ খুলেছে যেটির নাম আফছানা মেহেদী ওয়াল। এখানে সে মেহেদীর ব্যবসা শুরু করেছে পড়াশুনার ফাঁকে। বিভিন্ন ব্রাইডাল প্যাকেজ, বক্স, হাতে মেহেদী দেয়ার ছবি শেয়ার করে অনলাইনে সেগুলো বিক্রির মাধ্যমে আয়মুলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। আফছানা বলে, ‘আগে আমি প্রযুক্তির বিষয়ে এতো কিছু জানতাম না কিন্তু করোনাকালীন সময়ে এটি আমাকে অনেক সাহায্য করেছে, অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পেরেছি আমাদের সকলের উচিত প্রযুক্তির ভালো দিকটি নিয়ে নিজেদের জীবনে কাজে লাগানো’’।