ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকতে চাই না
সাতক্ষীরা থেকে মেহেদী হাসান শিমুল
অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। আর এই জলাবদ্ধতায় দুর্বিষহ হয়ে ওঠে জনজীবন। প্রতিবছর জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অর্থাৎ ৬ মাস জলাবদ্ধতার শিকার হয় সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা থেকে ধুলিহরের অন্তত ২০ গ্রাম। এছাড়াও সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫টি গ্রাম জলাবদ্ধতার শিকার হয়।
গত ৫-৬ বছর যাবত বেতনা নদীর তীরে অবস্থিত এই এলাকায় জলাবদ্ধতা কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় হাজার হাজার মানুষকে।প্রতিবছর জুলাই মাস আসতে না আসতেই সামান্য বৃষ্টিতেই সাতক্ষীরার বেতনা নদীর তীরে অবস্থিত প্রতিটি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেই সাথে রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজে, মসজিদ মাদ্রাসা, বাড়ি-ঘরসহ সবধরনের ভৌত অবকাঠামো পানিতে ডুবে যায় এবং ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে পৌরসভার পানি ইউনিয়নের খাল দিয়ে নদীতে পানি নিষ্কাশিত হতে না পারায় জলাবদ্ধতা হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে নদীতে লোকালয়ের পানি প্রবেশ করতে না পারায় এবং জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে ফসলের ক্ষেত, শত শত বিঘা মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ঘসময় ধরে জলাবদ্ধ থাকায় এসব এলাকার বিলগুলো আমন ধান চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে এলাকার কৃষকরা কৃষি বিমুখ হয় কাজের সন্ধানে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রায় ছয় মাস জলাবদ্ধতার কারণে জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এলাকায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে স্কুল মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। এছাড়া পানিবাহিত রোগে ভুগছে প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ।
প্রতিবছর জলাবদ্ধতার কারণে ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা পালপাড়ার মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রেও বিস্তর প্রভাব পড়ছে।জলাবদ্ধতায় একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে জলাবদ্ধতার শিকার এলাকাগুলো
বারসিক’র সহযোগিতায় এলাকার স্থানীয় যুব সমাজ ও সংগঠনগুলো সম্প্রতি এ জলাবদ্ধতা নিরসনে নানান প্রচারমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন। এলাকার মানুষের এই তীব্র সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে নি¤œলিখিত সুপারিশগুলো বিবেচনায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন:
এলাকার যতগুলো প্রাকৃতিক খাল আছে তার অনেকাংশ দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না। এগুলো উন্মুক্ত করতে হবে, কৃষি জমিতে বেড়িবাধ দিয়ে অবৈধ ঘের করার কারণে পানি নিষ্কাশনে বাধার সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের পথ না রেখে যত্রতত্র ঘের করতে দেওয়া যাবে না, পানির প্রবাহ সচল রাখতে খাল খনন করতে হবে, স্লুইস গেট নষ্ট হয়ে যাওয়া ও সঠিকভাবে পরিচালনা না করার কারণে ধীরগতিতে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। এর সঠিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে, নদী ভরাট হওয়ার কারণে নদীতে জোয়ার ভাটার না হওয়ায় পানি নদীতে প্রবেশ না করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে, প্রাকৃতিক খাল, জলাশয় ও ডোবার সীমানা নির্ধারণ ও সংরক্ষণ করতে হবে, রাস্তার ধারে পর্যাপ্ত পরিমাণে কালভার্ট তৈরি করা এবং যে কালভার্টগুলো আছে তা পানি নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত করতে হবে, ময়লা-আবর্জনা যেন নর্দমা ও প্রাকৃতিক খালে ফেলা না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে, বর্ষা মৌসুমের আগেই নর্দমা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বেতনা নদীর খনন করে নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। খননকৃত মাটি নদীর মূল সীমানার বাইরে ফেলতে হবে।
(লেখাটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় বিষয়ক ক্যাম্পেইনের একটি অংশ)
লেখক: ধুলিহর ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং সদস্য, শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিম