করোনা ভাইরাস ও একজন কৃষক শহর আলী
মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে বিউটি সরকার
কৃষক শহর আলী। পৈত্রিক নিবাস মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার নয়াবাড়ি গ্রামে। করোনা ভাইরাস রোধ করতে পারেনি তাঁর নিয়মিত কৃষি কাজকে। সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করেই ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন করেছেন বৈচিত্র্যময় নিরাপদ কৃষি পণ্য। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা হয় দেশের সকল হাট বাজার। সংকটের মুখে পড়েন উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়েই। এ প্রসঙ্গে কৃষক শহর আলী উল্লেখ করেন তার মত হাজারো প্রান্তিক কৃষকের দুর্দশার কথা। তিনি জানান ক্রেতা শুন্য হাট বাজারে অনেক সময় তাদের উৎপাদিত ফসল রাস্তায় ফেলে রেখে আসতে হয়েছে। গুণতে হয়েছে আর্থিক লোকসান। তথাপি থেমে থাকেনি কৃষক শহর আলী। লাউ, কুমড়া, চিচিংগা, ডাটা, ভেন্ডি, পুইশাক, বেগুন, কাঁচাকলাসহ চাষ করেছেন বৈচিত্র্যময় ফসল। যা নিজ এলাকাসহ বাংলাদেশ সরকারের সিংগাইর উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রশংসা কুড়িয়েছে। স্থানীয় বাজারে তার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে না পারলেও কৃষি বিভাগের সহায়তায় ঢাকাস্থ উন্মুক্ত কৃষি বিপনন বাজরে নিয়মিত বিক্রি করে নিজের সংসারের আর্থিক সংকট মোকাবেলা করেছেন কৃষক শহর আলী। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবারে গড়ে পায় দশ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে পেরেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরের মাধ্যমে বায়রা, গাড়াদিয়া, ছোটকালিয়াকৈর, বাইমাইল এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষক শহর আলীর পরিচালিত কৃষি কার্যক্রম পরিদর্শন করে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের কৌশল সহভাগিতা করেছেন।
করোনাকালীন সময়ে সরকারের উন্মুক্ত কৃষি বাজারে পন্য সরবরাহ করে শুধু নিজেই উপকৃত হননি, উপকার করেছেন এলাকার অন্যান্য কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে। এ প্রসঙ্গে কৃষক শহরআলী বলেন, ‘করোনা এলাকার সব মানুষ যখন ঘরে আটকা, বাজারে যাইবার পারে না, তখন আমি- এলাকার কৃষক শহীদ, জব্বার, হাসান, মোশারফ, মোকসুদ, লাইলি, হাবেজাসহ প্রায় ১৫ জন কৃষকের ফসল আমি বিক্রি করতে সহায়তা করেছি। এতে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে শুধু ফসল বিক্রি করে এলাকার মানুষকে উপকার করেছেন তাই নয়, এলাকার মানুষকে সহায়তা করেছেন বিনামূল্যে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি দিয়ে। এ প্রসঙ্গে মাঠে কর্মরত শহর আলীর স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, ‘করোনার সুম (সময়) মানুষ হাট বাজারে যাইবার পারে না, তাছাড়া ট্যাকা পয়সাও মাইনসের (মানুষের) হাতে ছিলো না, আমি সেই সুম দুই থেইক্যা আড়াইশো মাইনসের সবজি দিয়ে সহায়তা করছি।’
বর্তমান বিশ্বে এক আতঙ্কের নাম কোভিড-১৯। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা বিশ্বে। রাক্ষসী করোনা আতঙ্কে যখন নিভে গেছে শিশুর মুখের হাসি। গৃহবন্ধী করেছে তারুণ্যকে। সন্তানের নিরাপত্তার ভাবনায় দিশেহারা করে তুলেছে অসহায় পিতাকে। তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে দিয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে শিল্প-বাণিজ্য, কলখারখানা, যানবাহনসহ জীবনের স্বাভাবিক গতি। দাঁড়িয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতির চাকা। ঠিক সেই সময় নির্ভীক সৈনিকের মত কাজ করেছেন কৃষক শহর আলীর মত দেশের কৃষি পেশায় নিয়োজিত প্রান্তিক মানুষগুলো। করোনা ভাইরাস থামাতে পারেনি তার কর্মতৎপরতাকে। বৈচিত্র্যময় ফসল চাষের মাধ্যমে তারা একদিকে দেশের সর্ব সাধারণের খাবারের ধারাবাহিক যোগান দিয়েছেন অন্যদিকে সচল রেখেছেন নিজ পরিবারের অর্থনীতির চাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা এখন দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা। এ সমস্যা আগামীতে খাদ্যসংকটের আভাস দিচ্ছে। তাই আগামী দিনের খাদ্য সংকট নিরসনে এ সব প্রান্তিক কৃষকদের ফসল উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ বাজারজাতকরণে সরকারি নজরদারী বৃদ্ধি করা জরুরি।