সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকি
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
`আমাদের সংগ্রাম আজীবন, আমরা সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকি। শারীরিকভাবে কষ্ট, পরিবার, সমাজের বঞ্চনা অবহেলা, অশান্তি আমাদের জীবনে খুবই সাধারণ একটি বিষয়। কারণ চলার জন্য টাকা রোজগার কম করতে পারায়, কষ্ট ভোগ করতে হয় বেশি। তবে পরিবারে ঘরের কাজ, হাতের কাজ, বাড়িতে শাকসবজি আবাদ ও প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে কোনরকম জীবন চলে আমাদের।’
উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন হরিরামপুরের আন্ধারমানিকের অঞ্জলী দে। তিনি আরও বলেন, ‘ জীবনের প্রতি ভালোবাসা, সংসারের প্রতি মায়া ও মমতার কারণে আজও আমরা বেঁচে আছি। পরিবার-পরিজনের আন্তরিকতা, সেবা-সহযোগিতায় বাঁচতে উৎসাহিত করে। বর্তমান মহামারী করোনায় আমরা সচেতন আছি। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদেরকে সচেতন করাচ্ছে। তাই আমরা এখনও ভালো আছি। তবে করোনার সময় বাইরে যেতে না পারায়, কাজ কমে যাওয়ায় ও ঘরবন্ধী থাকায় জীবন ও জীবিকা প্রায় অচল হয়ে আসছে।’
প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আব্দুল করিম বলেন, ‘আমরা প্রতিবন্ধী মানুষ। আমরা কাজ করেই জীবন ধারণ করে থাকি। যেমন আমি সাইকেল রিক্সার মেকার। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধীতা আমাকে অন্য সাধারণ মানুষ থেকে একটু পিছিয়ে দিয়েছে। তবে আমি মানসিকভাবে দৃঢ় যে, আমি অন্যদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। বাঁচার জন্য সব কাজই করে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনাকালীন সময়েও ঘরে বসে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে জীবিকায়নে কাজ করছি। ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সংগ্রাম করতে হয় শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে যাতে করে তারা পরিবারে, সমাজে ও পরিবেশে সাথে টিকে থাকতে পারেন।’
আব্দুল করিম জানান, বারসিক ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে করোনা জনচেতনতায় কাজ করছে। উপজেলা প্রশাসন ও বারসিক করোনা মোকাবেলায় লিফলেট, পোষ্টার, বিলবোর্ড, মাইক দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। এছাড়া এ সংগঠনটি করোনা মোকাবেলায় ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুষ্টিকর খাবার বিষয়েও আলোচনা করে। ফলে গ্রামের মানুষ পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। এতে করে তারা উপকৃত হয়।
অন্যদিকে হরিরামপুরের যাত্রাপুরের বিপুল হালদার (৩৫) বলেন, ‘আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ। টেলিভিসান মেকানিক্যাল বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে হরিরামপুরের লেছড়াগঞ্জ বাজারে কাজ করছি। করোনায় মেকানিক্যাল কাজ কম থাকায় জীবিকার তাগিদে পদ্মা নদী থেকে মাছ ধরি। প্রতিবন্ধী সংগঠনের মাধ্যমে সমাজে ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের বৈষম্য ও অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মানুষেরা আজীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন টিকে থাকার জন্য। তারা অনেকসময় পরিবারে লাঞ্চনার শিকার হন, সমাজে বঞ্চিত হন এবং কোন কোনক্ষেত্রে তাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। বারসিক ও সমাজের বিবেকবান মানুষ আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন।’
ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের সচেতনতা অধিকার ও বৈষম্য রোধে সমন্বিতভাবে কাজ এখনও চলমান রয়েছে, যা নেতৃত্ব দিচ্ছে বারসিক। এই সংগঠনটি ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। করোনাকালীন সময়ে তাদেরকে চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে করোনায় খাদ্য ও আর্থিক সহযোগিতা লাভে সহযোগিতা করছে।