প্রাণ সম্পদ এবং ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষের পাশে হাবাদা সংগঠন
নেত্রকোনা থেকে মো: আলমগীর
“জীবন সংসারে অসহায় মানুষদের জীবনধারণ যে যে কি কষ্ট- তা আমরা জানি। কারণ সমাজে পিছিয়েপড়া মানুষদের কাতারেতো আমরাও আছি। আমরা সংগঠিত হওয়ার আগে প্রাকৃতিক দূর্যোগে (বন্যা,খরা, ঝড়তুফান, শীত) কোন মাধ্যম থেকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পেলে খুবই ভাল লাগতো, খুশি হতাম।” এভাবেই কথাগুলো বললেন হাবাদা সংগঠনের সম্মনিত সদস্য হাওয়া আক্তার। তারা ২০০৫ সালে নিজেরাই সংগঠিত হয়ে গড়ে তুলেছেন হাবাদা নামে একটি কুটির শিল্প সংগঠন। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ থেকে নিজ উদ্যোগে সাপ্তাহিক পাঁচ টাকা হারে সঞ্চয় জমা করে তৈরি করেন একটি সঞ্চয়ী অর্থ তহবিল। এই অর্থ তহবিলে বর্তমানে আমানত আছে প্রায় লক্ষ টাকার মত। তারা সংগঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ, সভা ও সমাবেশ, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর ও উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা মূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে দক্ষকরে তুলেছেন। তারা নিজেদের এলাকার ভিন্নভাবে সক্ষম (প্রতিবন্ধী), প্রবীণ, বিধবা ব্যক্তিদের নির্বাচন (তালিকা তৈরি) এবং প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অফিস আদালতে যোগাযোগর মাধ্যমে সাহায্য সহযোগিতা পেতে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়তই।
এ বছরের তীব্রশীত মানুষকে যেমন আক্রান্ত করেছে তেমনি আক্রান্ত করেছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ সকল গৃহপালিত প্রাণসম্পকে। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা মনে করেন এবার বিগত ২০-৩০ বছরের তুলনায় বেশি শীত পড়েছে। এই তীব্রশীতে মানুষসহ সকল পশুপাখিকে টিকে থাকার জন্য করণীয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। হাবাদা সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামের সকল পেশা এবং বয়সের মানুষের উপস্থিতে তীব্রশীত এবং করণীয় বিষয়ে সচেতনতা মূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আলোচনায় খোলামেলা ভাবে আগুন না পোহানো, প্লাস্টিক পুড়ে আগুন না পোহানো, হাঁস-মুরগি, গরু ছাগল এবং ভিন্নভাবে সক্ষম(প্রতিবন্ধী) ব্যক্তিদের শীত নিবারনের বিষয়ে গুরুত্ব পায়। খোলামেলা ভাবে আগুন পোহানো এবং প্লাস্টিক পুড়ে আগুন না পোহানোর বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয় এবং হাঁস-মুরগির ক্ষেত্রে খোকরী বা খোয়ার এর চারপাশে খড় পাটের চট ছিড়া কাথা দিয়ে ঢেকেরাখা, খুব ভোরে বা কুয়াশার সময় হাঁস-মুরগি ছেড়ে না দিয়ে ঘরে প্রয়োজনীয় খাবার দেওয়া ও গরু-ছাগলের ক্ষেত্রে গোয়াল ঘরে মেঝেতে প্রসস্ত করে খড় বিছিয়ে দেওয়া এবং শরীরে পাটের চট (ছালা), কাথাসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহারের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।
শীত নিবারনে হাবাদা কুটির শিল্প সংগঠনের সদস্যরা তাদের সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে আঠারটি দরিদ্র পরিবারে ১০টি গরু ও ৮টি ছাগলকে পাটের চট কিনে জামা তৈরী করে সহায়তা করে এবং গ্রামের ১০ জন ভিন্নভাবে সক্ষম (প্রতিবন্ধী) ব্যক্তিকে ১০টি কম্বল দিয়ে সহায়তা করেন। পাশাপাশি সংগঠনের প্রত্যেক পরিবারসহ গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোতে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলের ঘর শীতমুক্ত করার জন্য নিয়মিত পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণ করছেন। হাবাদা সংগঠনের এহেন উদ্যোগ দেখে সমাজের সাধারণ মানুষ এবং বৃত্তবানরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে টিকে থাকবে বৈচিত্র্য ও আন্তঃনির্ভরশীলতা এবং সমৃদ্ধ হবে বহুত্ববাদী সমাজ ব্যবস্থা।