শিশুদের ভাঙা গড়ার খেলা চলে আসছে নিরন্তর

চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু:

“সিন্ধু তীরে খেলে শিশু বালি নিয়ে খেলা,
রচি গৃহ হাসি মুখে ফিরে সন্ধ্যা বেলা।
জননীর অঙ্কোপরে প্রাতে ফিরে আসি,
হেরে-তোর গৃহখানি কোথা গেছে ভাসি।

আবার গড়িতে বসে -সেই তার খেলা,
ভাঙা আর গড়া নিয়ে কাটে তার বেলা।
এই সে খেলা-হায়,এর আছে কিছু মানে?
যে জন খেলায় খেলে- সেই বুঝি জানে।”

উপরোক্ত লাইনগুলোর সারাংশ বোদ্ধাজন মাত্রই পড়েছেন। শিশু বেলার ভাঙা আর গড়ার খেলা চলে আসছে নিরন্তর। যুগ যুগ ধরে। এর ব্যতিক্রমটা যেন ভাবাই যায় না।

চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের দোলং গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে আজাদ (১১)। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও এখন আর স্কুলে যায় না সে। পিতা চায়ের দোকান দার। যে বয়সে বই খাতা নিয়ে পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকার কথা স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোলাহলে মেতে থাকার কথা, বাবা মায়ের আদরের শিশু- সেই বয়সে অভাবের তাড়নায় আজাদকে কাজ করতে হয় ইটের ভাটায়। কয়েক দিন পূর্বে কাজ করার সময় পায়ে আঘাত প্রাপ্ত হলে দু’একদিন বিশ্রামের জন্য কাজে যায় নি সে। এ অবসরে বাড়ির সামনের রাস্তায় প্রতিকী সবজীর দোকান সাজিয়ে বসেছে সে- যার তার শিশু সুলভ আচরণেরই বহিপ্রকাশ।

sisutosh pic-1

শিশু আজাদ জানান, “হরিপুর ইউনিয়নের ধুলাউড়ির খালেকের ইটের ভাটায় কাজ করি। ইট কাটা শ্রমিকদের বালতিতে করে শুকনো বালি সরবরাহ করি। কাজ করার সময় পায়ে ব্যাথা পেয়েছি বলে কাজে যাই নি। খেলছি।

sisutosh pic-2
একটু দূরে দোকান সাজিয়ে বসেছে আজাদের বোন চাম্পা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম এর অধীনে দোলং গ্রামের কমর উদ্দিনের বাড়ির পাঠশালার শিশু শ্রেণির ছাত্রী সে।

sisutosh pic-3
আজাদ ও চাম্পার চাঁচাতো ভাই মোহাম্মদ আলীর বয়স ৬ বছর। শিশু শ্রেণির ছাত্র সে। স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরে দেখা দেখি প্রতিকী শাকসবজি, পানি, মাটি, কলাগাছ, নিড়ানি, কাঁচির দোকান দিয়ে বসে আছে ক্রেতার অপেক্ষায়।

sisutosh pic-4
একই পাড়ার আজিম হোসেনের ছেলে রিয়াদের বয়স ৮ বছর। পার্শবর্তী রামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র সে। আনন্দ আয়েশ আরাম উপভোগ করতে নগ্ন পায়ে শক্ত করে ধরে বসে আছে তিনটি বিয়ারিং যুক্ত কাঠের খেলনা গাড়িতে। পেছন থেকে তাকে ঠেলে এগিয়ে যেতে সহায়তা করছে বাড়ির পার্শস্থ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ও ইদ্রিস আলীর ছেলে রবিন।

শিশুদের এমন ভাঙা গড়ার খেলা দেখে আমরা অনেকেই হয়তো ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরে যাই শিশু বেলায়। স্মৃতি হাতরাই। ফিরে যাই পেছনে।

happy wheels 2

Comments