কৃষক নেটওয়ার্কিং শক্তিশালী হলে অধিকার আদায়ের পথ সুগম হবে
নেত্রকোনা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা, অহিদুর রহমান, গুঞ্জন রেমা, খায়রুল ইসলাম
গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় কৃষি ক্ষেত্রে সফল উদ্যোগী কৃষক। তাদের সাফল্য কৃষিক্ষেত্রে অনেককেই উদ্যোগী হতে অনুপ্রাণীত করবে। তবে তার জন্য প্রয়োজন তাদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং শক্তিশালী করা এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে জানা। কৃষিক্ষেত্রে উদ্ভুত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কৃষকের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন জ্ঞান ও প্রযুক্তি। আবার সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও রয়েছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও ধারণা। খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য সকলের জ্ঞান, ধারণা ও প্রযুক্তির মধ্যে সমন্বয় সাধনের নিমিত্তে বারসিক কলমাকান্দা রিসোর্স সেন্টারে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় কৃষক অধিকার ও নেটওয়ার্কিং শক্তিশালীকরণ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা।
মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী রামভুটান ফলের জন্য বিখ্যাত নাজিরপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের কৃষক ওসমান গনি বলেন, “কৃষকরা যা উৎপাদন করেন তা সঠিকভাবে বাজারজাত করার জন্য ও ফসল সংরক্ষণের জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায় সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সুযোগ বাড়াতে হবে।”
জৈব কৃষি চর্চাকারী বলে পরিচিত নাজিরপুর ইউনিয়নের ভেলুয়াতলী গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালিব বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গার কৃষকদের সাথে যোগাযোগ বাড়াইতে চাই। আমরা যে কাজগুলা করতাছি কৃষকদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়লে সেই কাজগুলা খুব সহজেই অনেক জায়গায় ছড়াইয়া দিতে পারবো।”
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফারুক হোসেন বলেন, “কৃষক শ্রম ঘাম দিয়ে যা উৎপাদন করছে সেই অনুসারে তারা যেন তাদের অধিকার পায়। আর অধিকার পেতে হলে নেটওয়ার্কিং অবশ্যই শক্তিশালী করা দরকার। বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা নিজ নিজ এলাকার চাহিদা অনুসারে অনেক কিছুই উৎপাদন করেন। কিন্তু তারা বিপনন সমস্যায় ভোগেন। তাই কৃষকদের নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা শুধুমাত্র উৎপাদন নয় পণ্য বিপননের ক্ষেত্রেও কৃষকদের সহযোগিতা করলে তারা আরো এগিয়ে যাবে।”
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ফিল্ড এসিস্ট্যান্ট মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “কৃষি আমাদের একটি বড় শিল্প। আমরা যা করতে চাই প্রায় সময় তা বাস্তবায়ন করতে পারিনা। কিন্তু যদি উদ্যোগ নেন তবে তারা তা বাস্তবায়ন করতে পারেন। বর্তমানে মৎস্য বিভাগে ইউনিয়ন পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প আছে। কৃষকদেরকে যদি ইন্টারলিংক করতে না পারি তাহলে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবোনা। এছাড়াও মৎস্য বিভাগে অনেক প্রশিক্ষণ আছে সেগুলোতে আরো অধিক কৃষককে সম্পৃক্ত করার জন্য সবার মাঝে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা অবশ্যই জরুরি।”
কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার কবীর নেওয়াজ খান বলেন, “কৃষকদের কৃষি ঋণের সুবিধা দেয়ার জন্যই কৃষি ব্যাংক। কৃষি ঋণের সুবিধা ও নিয়বালী তাদের জানতে হবে। জানার জন্য আসতে হবে। সবাইকে জানাতে হবে। পরস্পরের মাঝে নেটওয়ার্ক আরো জোরদার করতে হবে। তাছাড়া কৃষকগণ যে কাজে ঋণ নিচ্ছে সেই কাজে ব্যবহার করলে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা উভয়েরই সুবিধা হয় এবং সুফল পাওয়া যায়।”
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “সরকারি অফিসে যেসব সুযোগ আছে সেগুলো তাদেরকেই আদায় করে নিতে হবে। আমরা যা কিছু করি তা থিওরিক্যাল করি আর কৃষকরা করেন প্র্যাকটিক্যাল। তাই দুয়ের মাঝে সমন্বয় দরকার। আমাদের দিক থেকে সেবা দেয়ার যা কিছু আছে আমরা আমাদের জ্ঞানের পরিধি অনুসারে সহযোগিতা করতে চেষ্টা করবো। তবে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করলে কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রযু্িক্ত খুব সহজে পৌছে দেয়া সম্ভব হবে। তার জন্য যৌথ কর্মপরিকল্পনা করতে হবে।”
এছাড়াও মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহামান, কারিতাসের মনোনীতা দিও, পারি ডেভলপমেন্ট ট্রাস্ট’র সুকমল ঘাগ্রা, ডিএসকে’র মুক্তা পারভিন এবং বিভিন্ন এলাকার কৃষকবৃন্দ। সবারই প্রত্যাশা কৃষক তাঁর ন্যায্য মূল্য পাক, কৃষি উপকরণের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হউক, কৃষক আরো নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করুক। সর্বোপরি কৃষদের মাঝে নেটওয়ার্কিং আরো শক্তিশালী হউক যা তাদেরকে নিজেদের অধিকার আদায় করতে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং নিশ্চিত করবে দেশের খাদ্যসার্বভৌমত্ব।