মানিকগঞ্জের নন্দিত মুক্তিযোদ্ধা পৌর শিশু পার্কটির সংস্কারের উদ্যোগ নিন
মানিকগঞ্জ থেকে মো. নজরুল ইসলাম
‘পার্কে শিশু মন বিকশিত হয়, পারিবারিক গন্ডির বাইরে শিশু-অবিভাবক সকলেই বিনোদন চায়’- শিশুর শারীরিক ও মানসিকসহ সকল মানুষের মুক্ত চর্চার নির্ভরযোগ্য স্থান শিশু পার্ক। এই সকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে শিশুদের মুক্ত বিচরণের জন্য মানিকগঞ্জ শহরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও মানিকগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি শিশু পার্ক। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা শহরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন।
সামাজিক সংগঠনগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আতাউর রহমানের উদ্যোগে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে প্রায় এক একর জমির ওপর নির্মিত হয় মানিকগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা পৌর শিশু পার্ক। কয়েকটি রাইডার দিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও অযতœ আর অবহেলায় এটি ব্যহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় আবার মানিকগঞ্জের নাগরিকদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে তৎতকালীন জেলা প্রশাসক মো. নাজমুছ সাদাত সেলিম এবং পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী কামরুল হুদা সেলিম পার্কটির সংস্কার ও উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আবার জুন ২০১৮ সালে পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন কাজে পৌরসভাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। তারপর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে নতুন সাজে সজ্জিত করতে আরো নির্মিত হয় দোলনা, স্লিপারসহ নানা ধরণের খেলনা। আছে বাঘ, ভালুক, হাতি, হরিণ, উট, ডাইনোসরসহ ১৪টি ভাস্কর্য। পার্কের অভ্যন্তরে ২টি ল্যাট্রিন, ২টি ওয়াশ রুম এবং একটি স্টোর রুম নির্মাণ করা হয়। পার্কের ইলেকট্রিক ট্রেনে চড়তে ২০ টাকার টিকেট কাটতে হয়। তবে শিশুপার্কে প্রবেশে এবং অন্যান্য রাইডে চড়তে কোনও খরচ লাগে না।
নন্দিত এই শিশু পার্কটি কিছুদিন যেতে না যেতেই তার শ্রী হারিয়ে ফেলছে। শিশুর অভিভাবক প্রভাষক মো.আফজাল হোসেন বলেন, ‘এত সুন্দর শিশু পার্ক এখন বসার ও শিশুদের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চারিদিকেই যেন ময়লার ভাগাড় হয়েছে।’ শিশুর অভিভাবক লাবণী আক্তার বলেন, ‘নিজেরা বসতে পারিনা এবং শিশুকেও বিনোদন দিতে পারছিনা। রাইডারগুলো কিছু নষ্ট আছে আর ভালোগুলো তালা মেরে রাখা হয়েছে। ইলেক্ট্রিক ট্রেন বন্ধ না নষ্ট বোঝা মুশকিল। আগে পার্কে পৌরসভা কর্তৃক নিযুক্ত একজন তত্ত্ববধায়ক দেখতাম এখন কাউকে দেখি না। বাথরুম, টয়লেট ব্যাবহারের অনুপযোগী।’
শিশু পার্ক রক্ষানাবেক্ষণ কমিটির অন্যতম সদস্য ও জেলা সামাজিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক কামাল আহমেদ কমল বলেন, ‘নতুন রূপে পার্কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল হঠাৎ কেন কাজ বন্ধ হলো এটি আমি জানি না। তবে আমি এই ব্যাপারে খুবই হতাশ। তারপরও পার্কের সংস্কারের ব্যাপারে কর্তপক্ষের সাথে আরো ভালো করে বোঝাপড়া করব।’ মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলীর বলেন, ‘নতুন রূপে সজ্জিত করতে শিশু পার্কের সংস্কার কাজ চলছে। এছাড়াও পৌর এলাকায় নতুন রুপে আরো কয়েকটি নন্দিত শিশু পার্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
আমরা মানিকগঞ্জ পৌরবাসী ভালো একটি শিশু পার্ক পেলেও এর ব্যাবহার অনুপযোগী হওয়ায় সচেতন নাগরিক সমাজ খুবই হতাশ। আমরা আশা করি সরকার ও তার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই হতাশা কটিয়ে শিশুদের বিকাশে নতুন কিছু উপহার দিবেন।