করোনাসংকট ও বোরো মওসুমে ৭টি প্রস্তাব
ঢাকা থেকে পাভেল পার্থ
করোনারকালে লকডাউনের আগে মানুষ বাজারে হুমড়ি খেয়েছে। কীসের জন্য? মানুষ কি আসবাব কিনেছে না গাড়ি কিনেছে এইসময়? একটা প্লটের বন্দোবস্তি নিয়েছে না স্বর্ণের অলংকার কিনেছে? মানুষ কিনেছে খাবার। মোটাদাগে বললে চাল, ডাল, আলু, তেল, নুন, মরিচ, পেয়াঁজ। তো এই খাবার কারা জোগান দেয়? এডিডাস, মিৎতসুবিসি, মনস্যান্টো, কোকাকোলা না মাইক্রোসফট? কোনো বহুজাতিক কোম্পানি নয়, দুনিয়ার খাবারের জোগান আসে গ্রামীণ কৃষকের রক্তঘামের ব্যাকরণ থেকে। আর বেঁচে থাকতে প্রজাতি হিসেবে মানুষসহ সকল প্রাণেরই প্রাথমিক শর্ত এই খাদ্য। কিন্তু করোনার কালে কেমন আছেন দেশের গ্রামীণ কৃষকসমাজ? কী প্রণোদনা পেয়েছেন তারা? ঐতিহাসিকভাবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে কৃষক ফসল ফলায় যেকোনো দুর্যোগ আর বিপদে তার পাশে কেউ দাঁড়ায় না। কেউ তার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার অংশীদার হয়না। বন্যা, পাহাড়ি ঢল, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, খরা কী পোকার আক্রমণ সকল বিপদ সামাল দিতে হয় কৃষককেই। তারবাদেও বাজারে দাম মেলে না উৎপাদনের, আংশকা থাকে পরবর্তী কৃষি মওসুম শুরুর। করোনারকালে দুনিয়াজুড়ে যখন লকডাউন, থেমে নেই গ্রামজনপদের কৃষিজীবন। পুরুষেরা জমিনে যাচ্ছেন, নারীরা মাচায় তুলে দিচ্ছেন লাউ-কুমড়োর লতা। এই তীব্র করোনা সংকটেও বোরা মওসুমের ফসল তোলার জন্য দেশের গ্রামজনপদ নিদারুণ শংকা নিয়ে অপেক্ষা করছে। নিরাপদ সুরক্ষা বিধি মেনে কীভাবে বোরো মওসুমের ফসল তোলা যাবে কৃষকের ঘর থেকে চাতাল, বাজার কী সরকারের গুদাম অবধি এখনো এসবের কোনো প্রস্তুতি নেই। তাহলে কীভাবে আমরা সামাল দেব করোনার ক্রান্তিকাল? এ নিয়ে দেশের ভিন্ন ভিন্ন কিছু প্রতিবেশ অঞ্চলের কৃষকের সাথে মোবাইলে আলাপ হয়েছে। চলতি আলাপে বোরো মওসুমে ফসল তোলার ক্ষেত্রে কিছু সুরক্ষাবিধি প্রস্তাব করা হচ্ছে। আশাকরি কৃষিমন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সজাগ এবং দ্রুত করোনাকালে বোরো মওসুম ঘিরে কিছু বিশেষ সুরক্ষাবিধি ও প্রণোদনা গ্রামীণ কৃষকদের কাছে হাজির করবেন। কারণ কৃষকসমাজ সংক্রমিত হলে, গ্রামে করোনার বিস্তার ঘটলে চুরমার হয়ে যাবে দেশের খাদ্যসম্ভার। স্মরণে রাখা দরকার গ্রামীণ কৃষকসমাজ আক্রান্ত হয়েছিল বলেই বিগত কলেরা কী গুটিবসন্ত মহামারীকালে দেশে তৈরি হয়েছিল তীব্র খাদ্যসংকট। আমরা কেউ চাইনা করোনারকালেও এই সংকট তৈরি হোক। আর চাইনা বলেই সর্বোচ্চ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশের কৃষক সমাজের পাশে সামগ্রিক সুরক্ষাবিধি ও প্রণোদনা নিয়ে আমাদের দাঁড়ানো জরুরি।
২.
তথাকথিত সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে বোরো মওসুম দেশের প্রধান কৃষি মওসুম হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এ সময়টাতে বহুজাতিক কোম্পানিদের সার-বিষ-বীজের ব্যবসাও হয় বেশি। দেশের সকল কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলে বোরা মওসুমের ধান কাটার ধরণ ও সংস্কৃতি এক নয়। তারপরও এই মওসুমে সবচে বেশি মৌসুমী শ্রমিকের জোগান হয় গ্রামাঞ্চলে। এদের বেশিরভাগ গ্রাম ও জেলার বাইরে থেকেই আসে। তো এবারের বোরো মওসুমে কত শ্রমিক ধান কাটার জন্য একত্র হতে পারে? খাদ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে চলতি বোরো মওসুমে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান, সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিন টন আতপ ও সেদ্ধ চাল এবং ৭৫ হাজার মেট্রিক টন গম কিনবে সরকার। ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা কেজি দরে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ২৬ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কিনবে সরকার। চলতি মাসের ২৬ এপ্রিল থেকে ধান ও ৭ মে থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হবে এবং সংগ্রহ শেষ হবে ৩১ আগষ্ট। এছাড়া ২৮ টাকা কেজি দরে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৭৫ হাজার মেট্রিক টন গম কেনা হবে। যদিও ২০১৯ সনে সরকার বোরো মওসুমে ৪ লাখ টন ধান ও ১৪ লাখ টন চাল সংগ্রহ করেছিল। গ্রামাঞ্চলের একটি সাধারণ হিসাব হলো এক বিঘা জমিনে প্রায় ২০ মণ ধান ফলে এবং এই ধান চার জন শ্রমিক মিলে একদিনে কাটতে পারে। তারপর একদিন লাগে ধান মালিকের বাড়ি পরিবহনে। আরো একদিন লাগে ধান ঝাড়াই-মাড়াই করতে। এখন কিছু ধানকাটার মেশিন ও ধান মাড়াই-ঝাড়াই মেশিনের চল হয়েছে। দৈনিক একজন মানুষ প্রায় পাঁচ মণের মতো ধান কাটলে সরকারের ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কাটতে প্রায় বত্রিশ লাখ মানুষ একদিনে দরকার। আর বোরো মওসুমের সামগ্রিক ফলন হিসাব করলে এই সংখ্যা কত হতে পারে? কিন্তু এটি সম্ভব নয়। কারণ সব এলাকার জমিন, ফলনের পরিস্থিতি, কাজের ধরণ কৃষিবিন্যাস এমন নয় যে একদিনে সব ধান কাটা যাবে। ধান কাটতে মূলত কয়েকজন শ্রমিকের একটি দল কোনো গৃহস্থ বাড়িতে নিযুক্ত হন এবং চুক্তিমতো সব ধান কেটে মজুরিসহ বিদায় নেন। কিন্তু তারপরও বোরো মওসুমের ধান কাটা থেকে সংগ্রহ, ঝাড়াই থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মজুতকরণে নানা বয়সী ও লিঙ্গের মানুষের সামাবেশ ঘটবে। করোনাকালে কৃষকের এই সমাবেশ কীভাবে সংক্রমণমুক্ত নিরাপদ হবে?
এলাকাভিত্তিক ধানকাটার সময়সূচি তৈরি
দেশের সব এলাকায় এমনকি একটি গ্রামেও একসাথে ধানকাটা শুরু হওয়া সম্ভব নয়। কৃষিবিভাগের উপসহকারী কৃষকর্মকর্তার মাধ্যমে তার এলাকার সকল বোরোচাষী কৃষকদের তালিকা তৈরি করা যেতে পারে। কার জমিনের ফসল কখন কাটার উপযোগী এসব তথ্য নিয়ে এলাকার জন্য ধানকাটার একটি এলাকা ও পরিবারভিত্তিক সময়সূচি তৈরি করে এটি পাবলিক পরিসরে পূর্বাভাষ হিসেবে জানানো যায়। তাহলে বোঝা যাবে কোন গ্রামে কোন পরিবারে কবে ধান কাটার তারিখ। সেই অনুযায়ী গ্রামীণ পরিবার ও শ্রমিকেরাও সহজে সংযুক্ত হতে পারবে। আর কৃষক-শ্রমিকদের ভেতর চলমান সম্পর্ককের ধরণকে কাজে লাগিয়ে করোনা-সুরক্ষাকে মেনে কাজটির সমন্বয় কতে পারে কৃষিবিভাগ।
স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগ ও মজুরি প্রণোদনা
এবার নানাভাবেই শ্রমিক সংকট দেখা দিবে। এই সংকটের ধরণ কয়েকবছর ধরে চলা শ্রমিক সংকটের মতো হবে না। বৃহত্তর হাওরাঞ্চলে ধান কাটতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা আসতে পারছে না। আবার নি¤œআয়ের দিনমজুর অনেকেই এখন শহরে ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। তার মানে এই মওসুমে নানা জায়গায় গ্রামে কর্মহীন অনেক গরিব মানুষ। কর্মহীন এই মানুষদেরই এবারের বোরো মওসুমে ধান কাটার ক্ষেত্রে আহবান জানিয়ে উৎসাহিত করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছা ও দক্ষতাকেও বিবেচনায় রাখা জরুরি। এই সংকটে মজুরি বিতর্ক আরেক সংকট তৈরি করবে। কোথাও সস্তায় শ্রম বেচবে অভাবী মানুষ, আবার কোথাও হয়তো শ্রমিক সংকট দেখা দিবে। দেশব্যাপি একটি ন্যূনতম দৈনিক মজুরি এবার নির্ধারণ করা জরুরি। এছাড়া সংকটের কারণে অনেক গ্রামীণ কৃষিজীবী পরিবারের পক্ষে শ্রমিকের সকল মজুরির সংকুলানও কঠিন হবে। সরকার এক্ষেত্রে ধানকাটা শ্রমিকের মজুরিটি প্রণোদনা হিসেবে নিশ্চিত করতে পারে।
নিশ্চিত হয়ে শ্রমিক নিয়োগ
এবছর খুব হিসাব করে প্রতিটি কৃষক পরিবারকে শ্রমিক নিয়োগ করতে হবে। বিশেষ করে শ্রমিকের বিগত দুই মাসের পরিভ্রমণ ও সংস্পর্শের ইতিহাস জানা জরুরি। পাশাপাশি করোনার মতো কোনো উপসর্গ আছে কীনা জেনে নেয়া জরুরি। এক্ষেত্রে বহিরাগত শ্রমিকদের অনুৎসাহিত করাই জরুরি। কারণ বাইরে থেকে আসা সকলকেই ১৪দিন স্বেচ্ছা সঙ্গনিরোধ করা জরুরি। বাইরে থেকে আসা কোনো শ্রমিককে যদি ১৪দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে সঙ্গনিরোধ করতে হয় তবে তো ধান কাটা মওসুমই শেষ হয়ে যাবে। তাই এই সংকট এড়াতে রাষ্ট্রকে স্থানীয় এলাকাতেই সকল শ্রমিকের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে হয়তো লকডাউন ভেঙে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুধু ধান কাটার জন্য কৃষককে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে হবে না। তারপরও যদি কোনো শ্রমিক ধান কাটতে কোনো এলাকায় চলে যান বা যারা স্থানীয়ভাবেও যাবেন তাদেরকে কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পর ১৪ দিন নিজ বাড়িতে স্বেচ্ছায় সঙ্গনিরোধ করতে হবে। আর এক্ষেত্রে তাদের খাদ্যসহ জরুরি প্রয়োজন গুলো মেটাতে পারেন স্থানীয় সরকার বিভাগ।
শ্রমিকের করোনা নিরাপত্তা ও সুরক্ষা
বোরো মওসুমে কর্মরত কৃষক-শ্রমিকদের জন্য ধানজমিন থেকে শুরু করে তাদের থাকার জায়গা অবধি সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেকর জন্য মাস্ক ও গামছা সরবরাহ করা যায়। কাস্তেসহ কৃষিসরঞ্জাম ও উপকরণ গুলো ব্যবহারের আগেপরে ভাল ভাবে ধুয়ে রাখতে হবে। বিশেষভাবে হাওরাঞ্চলে এই মওসুমে শ্রমিকেরা ধানের খলায় ভিন্ন ঘর বানিয়ে বসবাস করেন, আবার অনেকে গৃহস্থ বাড়ির একটি আলাদা ঘরেও থাকার জায়গা পান। যদি কাজের প্রয়োজনে শ্রমিকদের গৃহস্থ বাড়িতে থাকতে হয় তবে অবশ্যই সেখানে প্রত্যেকের বিছানা নিরাপদ দূরত্বে স্থাপন কতে হবে। প্রতিজন শ্রমিকের কাপড়চোপড় ও ব্যক্তিগত সরঞ্জাম নিজেরাই পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করতে পারলে ভাল হয়। যে কাপড় পরে শ্রমিকেরা সারাদিন কাজ করবেন তা প্রতিদিন ধুয়ে দেয়া জরুরি। প্রশ্ন হলো এইসব নিরাপত্তা সামগ্রি দেশের সকল গ্রামে কৃষক পরিবারের পক্ষে কীভাবে সরবরাহ করা সম্ভব? এইসব নিরাপত্তা উপকরণও উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সরকার তালিকা অনুযায়ী কৃষক পরিবারের ভেতর শ্রমিকদের জন্য বিতরণ করতে পারে। কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো শ্রমিক এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন বা কারো যদি করোনার কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদসহ স্বাস্থ্য বিভাগকে দ্রুত তা জানাতে হবে। দরকার হলে হয়তো এমন ঘটনায় সেই এলাকায় স্থানীয়ভাবে লকডাউন ও সঙ্গনিরোধের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। পাশাপাশি অসুস্থ শ্রমিককের সামগ্রিক চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করতে পারে।
জমিন থেকে সরাসরি ধান ক্রয়
জমিন থেকে ধান কাটার পর ধান পরিবহনে এক একটি ধানের বোঝা মাথায় তোলা, নামানো, একত্রকরণ সবক্ষেত্রেই নানাভাবে শারিরীক সংস্পর্শ এড়ানো অসম্ভব। তাই এই করোনারকালে কৃষকের জমিন থেকে সরাসরি সরকার ধান ক্রয় করতে পারে। এতে বিস্তার ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। পাশাপাশি এটিও হিসাব করে দেখতে হবে এতে যেন কাজ কমে গিয়ে শ্রমিকের মজুরিতে কোনো সংকট তৈরি না হয়।
শ্রমিকদের নিরাপদ পরিবহন
স্থানীয়ভাবে শ্রমিক নিয়োগ হলেও একটি গ্রামে তো আর সবার জমিনের ধান কাটার জন্য একটি গ্রাম থেকেই শ্রমিকের সংকুলান হবে না। এক্ষেত্রে একটি জেলাতেও যদি হয় তবুও শ্রমিকদের ধানকাটার কাজে পরিবহন জরুরি হবে। কিন্তু এই গণপরিবহনকে এই সময়ে নিরাপদ করার কায়দা কী? এক্ষেত্রে উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ এই কাজটি সমন্বয় করতে পারেন। পূর্বে উল্লিখিত এলাকা অনুযায়ী ধান কাটার সময়সূচি দেখে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকদের এলাকার একটি নির্দিষ্টস্থানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে একত্র হওয়ার জন্য বলতে পারেন। শ্রমিকদের জন্য স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য কোনো গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই পরিবহন জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করতে হবে। এই পরিবহন কৃষক-শ্রমিক ব্যতীত অন্য কেই এই সময়ে ব্যবহার করতে পারবে না। সরকার এই পরিবহন খরচটিও প্রণোদনা হিসেবে চিন্তা করতে পারে।
গ্রামীণ কৃষিপরিবারের সুরক্ষা
কৃষিশ্রমিক কেবল নয়, গ্রামীণ কৃষিপরিবারগুলো সকলকেই এই সময়ে সুরক্ষাবিধিগুলো মেনে চলা জরুরি। এক্ষেত্রে ধান মাড়াই-ঝাড়াই থেকে বাড়ির পরিচ্ছন্নতা, ধান সেদ্ধ, রোদে দেয়া, মজুতকরণ নানাকাজে গ্রামীণ নারীর ব্যস্ততা ও সংস্পর্শ বাড়ে। তাই বাড়ির নারীসহ শিশুদের নিরাপদে রাখার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা এই বোরো মওসুমে কৃষকপরিবারগুলোকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে।
৩.
এতো কিছুর পরেও প্রশ্ন ওঠতে পারে তারপরও কী করোনার সংক্রমণ ও বিস্তার ঠেকানো সম্ভব? হয়তো নয়। কিন্তু সুরিক্ষাবিধি মানলে হয়তো ঝুঁকিটা কম হবে, গ্রামীণ কৃষকসমাজ বিপদে কম পড়বে। কারণ কৃষকসমাজ সংক্রমতি হওয়া মানে চরম খাদ্যসংকট। এ বছর সরকার আমন মওসুমে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৭ টন আমন ধান সংগ্রহ করেছিল। সরকারের আমন সংগ্রহ মৌসুম শেষ হয়েছে এ বছরের ৫ মার্চ, যখন করোনা বৈশ্বিক সংকট তৈরি করেছে। করোনা সংকটে এখনি কমেছে সরকারি খাদ্য মজুত। করোনাসংকটে এক মাসে দেশে ধান ও চালের মজুদ কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। আমরা এখনো জানিনা চলতি বোরো মওসুমে আমরা আমাদের সব ধান গোলায় তুলতে পারবো কীনা! হাওরে আছে পাহাড়ি ঢলের শংকা, উপকূলে আছে ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত। তারপরও আমাদের সম্মিলিতভাবে সামগ্রিক সমন্বয়ের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সরকারের অনেক কিছুই আছে, কাঠামো, লোকবল কী নীতি। এই করোনারকালে দরকার সামগ্রিক বিশ্লেষণ, সমন্বয় এবং দায়িত্বশীল আচরণ। হাওরসহ দেশের অনেক অঞ্চলে কোনোধরণের সুরক্ষাবিধি ছাড়াই ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু বোরো মওসুমের সামগ্রিক কাজকে সুরক্ষাবলয়ের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে কেবল সংক্রমণ বা বিস্তার নয় আরো ভয়াবহ সংকট হয়তো অপেক্ষা করছে সামনে। আশা করি কৃষি মন্ত্রণালয় দ্রুতই বোরো মওসুমের জন্য সুরক্ষবিধি তৈরি করবে এবং গ্রামীণ কৃষিজীবনকে নিরাপত্তাবলয়ে এনেই কৃষির বিকাশ অব্যাহত রাখবে।