যমুনায় ঝুলে আছে বাচামারা প্রাথমিক বিদ্যালয়: দুইশত শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চিত
আব্দুর রাজজাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
যমুনা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় যমুনা তীরবর্তী বাচামারা উত্তরখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীনের মুখে। বিদ্যালয়টি যে কোন সময় চলে যেতে পারে নদীগর্ভে। নদীতে চলে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় দুইশত শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন। শুধু বাচামারা ইউনিয়নের ৪৪ নং উত্তরখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিই নয়; যুমনার ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও একটি কবরস্থান। নদী ভাঙনের হাত থেকে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রিক্তা আক্তার জানান, তিন বছর ধরে বিদ্যালয়টি ভাঙনের আশংকার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার পত্র মারফত জানালেও তারা ভাঙন রোধ কিংবা ভবন স্থানান্তরের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। এখন বিদ্যালয়টি রক্ষাসহ প্রায় পৌনে দুইশত শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
প্রধান শিক্ষক আরো জানান, ১৯৬৯ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৩৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে দ্বিতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। এই বছরেও শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করে বিদ্যালয়টিতে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. শহিদ মোল্লা জানান, গত বর্ষায়ও বিদ্যালয়টি হুমকির মুখে ছিলো তখন বিদ্যালয়টি স্থানারিত ও ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রেজুলেশন আকারে দেওয়া হয়েছিল। জনপ্রতিনিধিদের কাছেও আবেদন করা হয়েছিল কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, সময় মতো প্রদক্ষেপ নেয়া হতো তাহলে এগুলো শিক্ষার্থী ও ভবনের ক্ষতি আশংকা থাকতো না। তিনি জানালেন যমুনায় ঝুলে আছে বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনটি।
বাচামরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেললে স্কুলের ভবনটি রক্ষা সম্ভব। তিনি জানান, এই এলাকাটি ভাঙন ঠেকাতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যা হেড অফিসে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে ২০/২৫ একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এবিষয়ে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মামুন হাওলাদার জানান, প্রায় অর্ধশত বছরের পুরোন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষার আর কোন সুযোগ নেই। ভাঙনের যে অগ্নিমুর্তি তাতে কোন অবস্থায় ভাঙনের কবল থেকে এ যাত্রায় রক্ষা করার কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব নয়। তবে তিনি জানালেন, যমুনা নদীর ভাঙনের কবল থেকে বাচামরা এলাকা রক্ষা করতে ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে । যা চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমার সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, “ভাঙনের হুমকির মুখে বাচামারা উত্তর খন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বি ভবনের নিলামের ব্যাপারে ডিসি সার (জেলা প্রশাসক) কে জানানো হয়েছে। এছাড়া আমি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিলামের জন্য নীতিমালা ব্যবস্থা করে দিয়েছি তিনি সব করবেন।”