ভার্মি কম্পোস্ট সেরা মানে ও গুণে, কৃষকের কাজেই প্রমাণ মেলে
রাজশাহী থেকে মোঃ তৌহিদুল
রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়ন সারাবছর বৈচিত্র্যময় সবজি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। এই এলাকার কৃষকদের চাষকৃত সবজি রাজশাহীসহ দেশের অনেক জেলার সবজির চাহিদা মেটায়। এই এলাকা শুধু উদ্যোন ফসল হিসেবে সবজি চাষ হয় ব্যাপক আকারে মাঠ ফসলেও সবজি চাষ হয়। বড়গাছি বাজার থেকে প্রতিদিন সারাদেশে মৌসুম ভেদে পটল, মুলা, লাউ, চালকুমড়া সীম, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা, বেগুন, আলু, পাতাকপি, ফুলকপি, ওলকপির মতো সবজিগুলো পাইকারের মাধ্যমে সারা দেশে বিক্রি হয়। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিনিয়ত সবজি চাষের কারণে এই এলাকার জমিতে প্রচুর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হয়। আর এই কারণে জমিগুলো হারিয়ে ফেলেছে উর্বরাশক্তি। কৃষকরা অল্প সময়ে ফসল ফলানোর জন্য বেশি বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফলন আনতে চায়। কিন্তু কোন কোন কৃষক সব সময় চিন্তা করে জমির মাটির, পরিবেশের ও প্রকৃতির। তেমনই একজন কৃষক কারিগরপাড়া পশ্চিমপাড়া (পাকার মাথা) গ্রামের কৃষক মোঃ আঃ বারী (৫৫)। তিনি শুধুমাত্র ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে লাউ, চাল কুমড়া, সীম চাষ করেন।
কৃষক মোঃ আঃ বারীর জমিতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি লাউয়ের পরিচর্যা করছেন। লাউ চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গরমের সময় লাউয়ের চাহিদা থাকে বেশি। আমি বিগত ১৫ বছর ধরে লাউ চাষ করছি। আগে আমি রাসায়নিক সার দিয়ে চাষ করতাম। প্রথম প্রথম ফলনও ভালো পেতাম। কিন্তু খেয়াল করলাম আস্তে আস্তে ফলন কমে যাচ্ছে। আবার খুব বেশি সময় লাউয়ের গাছ সতেজও থাকে না। তাই আমি ৪ বছর আগে থেকে জমিতে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করা শুরু করি। এখন অনেক উপকার পাচ্ছি।’ ভার্মি কম্পোস্ট সার কোথা থেকে নিয়ে ব্যবহার করেন জানতে চাইলে তিনি কারিগর পাড়া গ্রামের মোছাঃ বিলকিস বেগমের কথা বললেন।
বারসিক বড়গাছি ইউনিয়নে বিগত ২০১৬ সাল থেকে জনগোষ্ঠির উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করে আসছে। পরিবেশ প্রতিবেশ উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এখানে উল্লেখ্য যে, কারিগরপাড়া গ্রামে কয়েকজন নারী বসতবাড়ির আঙ্গিনায় চাষকৃত সবজিতে জৈব সার ব্যবহারের জন্য ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেখানে বারসিক কারিগরি ও কিছু উপকরণ দিয়েও সহায়তা করে। আস্তে আস্তে নারীরা বড় আকারে ও বাণিজ্যিকভাবে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করতে থাকেন। এখান থেকেই কৃষক মোঃ আঃ বারী ভার্মি কম্পোস্ট সম্পর্কে এর উপকার সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ৪ বছর আগে থেকে সকল ফসলে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার শুরু করেন।
এবার মোঃ আঃ বারী ২৭ শতাংশ জমিতে শুধু ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে লাউ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট ফলে লাউ গাছগুলো শক্ত ও সতেজ হয় এবং লাউ এর গাছ অনেক দিন বাঁচে। লাউ এর গাছ এর পাতা অনেক বড় ও সবুজ হয়ে থাকে। এর ফলন ও বেশি হয়। ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে লাউ গাছের গোঁড়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি হয় এবং গাছ শক্ত হয়ে থাকে।’ তিনি আরো জানান, গত ৪ বছর আগে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে লাউ চাষ করে ফলন ভালো হয়নি। কারণ মাটির উর্বরতাশক্তি ছিলো না।
তিনি আগে সপ্তাহে লাউ পেতেন ১১০-১২০টি। কিন্তু বর্তমানে ভার্মি কপোস্ট সার ব্যবহার করার পর থেকে লাউয়ের গাছ বেশি দিন বাঁচে এবং গাছ সতেজ বলে বর্তমানে তিনি সপ্তাহে ২৫০-২৭০টি লাউ পান। লাউ চাষ করে বছরে আয় করেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে অনেক বেশি খুশি এবং সন্তুষ্ট। তিনি জানান, ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন খরচও কম হচ্ছে এবং পানির সেচ কম লাগে। এ সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরাশক্তি আবার ফিরে এসেছে। কারণ এখানে অনেক কেঁচো দেখা যায়।
আমাদের দেশে এমন কৃষক আছেন যারা সবসময় নিজের কাজের মাধ্যমে মাটি, পরিবেশ ও প্রকৃতি সুরক্ষা করার চেষ্টা করেন। মোঃ আঃ বারী তেমনই একজন কৃষক। সরকারী ও বেসরকারী পর্যায় থেকে যদি এ কৃষকদের স্বীকৃতির উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে তাঁরা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবেন।