খাদ্যকে নিরাপদ রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে
মুকতার হোসেন, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
হরিরামপুর উপজেলায় লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে হরিরহদিয়া গ্রামে হরিহরদিয়া কৃষক সংগঠনের আয়োজনে সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাদ্য উৎসব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান এবং হরিহরদিয়া কৃষক সংগঠনের সভাপতি নান্নু প্রামণিক। হরিরামপুর চরাঞ্চলের স্থানীয় কৃষকদের চর্চায় যেগুলো রয়েছে যা এলাকার মানুষের জীবন জীবিকায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে সে সকল উপকরণ নিয়ে খাদ্য উৎসবে স্টল প্রদর্শন করেন কৃষাণী ও কৃষকগণ।
প্রদর্শিত খাদ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে নিরাপদ সবজি, অচাষকৃত উদ্ভিদ, স্থানীয় কৃষি উপকরণ, পরিবেশবান্ধব চুলা, নানা রকমের শীতের পিঠা, মুরগির হাজলসহ স্থানীয় বীজ বৈচিত্র্য। অংশগ্রহকারীরদের নজর কাড়েন হাজেরার বীজ বৈচিত্র্য স্টল। তাঁর স্টলে রয়েছে ৪০ ধরনের স্থানীয় বীজ। নিরাপদ খাদ্য উৎসব-২০২৩ মেলায় উৎস্টুক অংশগ্রহণকারীরা ভিড় জমায়। তাঁর বীজ বাড়িতে এত ধরনের বীজ রয়েছে যা দেখে অনেক কৃষককে অনুপ্রাণিত করেছে। মানিকগঞ্জ হরিরামপুর উপজেলার পদ্মার চরে বাড়ি হাজেরার। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে তাঁর। এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন লেছড়াগগঞ্জ চর উন্নয়ন কৃষক সংগঠন।
বলে রাখা ভালো যে, চরাঞ্চলের বন্যা, খরা, নদীভাঙ্গন, অতিবৃষ্টি, বজ্রপাতসহ রয়েছে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে। যার ফলে প্রতিবছর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশেষ করে বন্যার পরে এলাকায় দেখা দেয় বীজের সংকট। মূলত এই বীজের সংকট মোকাবেলায় নিজ বাড়িতে হাজেরা বেগম গড়ে তুলেছেন বীজঘর। যেখানে এলাকার স্থানীয় বীজগুলো সংরক্ষণ করা হয়। বীজবাড়ি থেকে এলাকার মানুষকে বীজ সহায়তা করে থাকেন। কৃষকরা বীজবাড়ি থেকে বীজ বিনিময়ের মাধ্যমে জাত বৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। প্রাকুতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় হাজেরাার বীজবাড়ি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নিরাপদ খাদ্য উৎসবে এলাকায় শতাধিক কৃষকরা, যুবক, প্রবীণ কৃষক, ইউপি সদস্য, সাংস্কৃতিক কর্মী ও মৎস্যজীবীসহ চরাঞ্চলের তিনটি জনসংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শহীদ মোল্লা বলেন, ‘চরাঞ্চলে নারীরা সরাসরি কৃষি কাজের সাথে যুক্ত রয়েছে। ফসল সংগ্রহ থেকে শুরু করে ফসল রোধে শুকানো, ঝাড়া পোচা, ঘরে বীজ রাখাসহ নানান ধরনের কার্যক্রম করে আসছেন। তার মধ্যে পাটগ্রামচরের হাজেরা আমাদের এলাকা উপযোগি যে বিভিন্ন ধরনের বীজ সংরক্ষণ করেছেন তা আমাদের খুবই প্রশংনীয় একটি কাজ করেছেন। এলাকায় এ সকল অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নিজেদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, চর্চা এবং নিজস্ব সংস্কৃতিকে রক্ষা করবে।’
উত্তর পাটগ্রামচর নারী উন্নয়নের সভাপতি আরজিনা বেগম বলেন, ‘চরাঞ্চলে অনেক কুড়িয়ে পাওয়া শাক পাওয়া যেত, যা আমাদের টাকা দিয়ে কিনতে হয় নাই। বাড়ির আশেপাশে জমির আইলে পাওয়া যেত। চরে বারবার নদী ভাঙন ও বন্যার কারণে অনেক অচাষকৃত উদ্ভিদ আমাদের এলাকা থেকে কমে গেছে। আমাদের এই শাকগুলো সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।’ আলোচকবৃন্দ আলোচনায় তুলে ধরে বলেন, ‘খাদ্যকে নিরাপদ রাখতে আমাদের সবার উদ্যোগ নিতে হবে।’ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, কৃষক সানজিদা বেগম, বারসিক কর্মকর্তা মুকতার হোসেন, সুবীর সরকার ও সত্যরঞ্জন সাহা প্রমুখ।
নিরাপদ খাদ্য উৎসব অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় কৃষক মোক্তার আলী এবং বাবলু মিয়া গান পরিবেশন করেন।