মানিকগঞ্জের কৃষকরা লাল মূলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ
অনেকেরই খাদ্য তালিকায় মূলা অপছন্দের একটি সবজি। মূলার নাম শুনেই নাক কুঁচকেও ফেলেন অনেকে। আবার কেউ কেউ সস্তা দামের, নিম্নমানের সবজি মনে করে বাজার থেকে কিনতে ইতস্তত বোধ করেন। অথচ এই সস্তা সবজিটিই আপনাকে দিতে পারে অনেক পুষ্টিগুণ, নিরাময় করতে পারে অসংখ্য রোগ। দেখতেও যেমন সুন্দর, তেমনি উৎপাদনও হয় বেশি। দামও পাওয়া যায় ভালো। তাই মানিকগঞ্জের কৃষকরা দিন দিন ঝুঁকছেন লাল মূলা চাষের দিকে।
মূলা সালাদ, তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। আবার মূলার পাতা শাক হিসেবেও খাওয়া হয়। তাই মূলা চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব। মুলা ঈৎঁপরভবৎধব গোত্রের জনপ্রিয় সবজি, বৈজ্ঞানিক নাম জধঢ়যধহঁং ংধঃরাঁং. আমাদের দেশে সাদা ও লাল দুই প্রকার মূলা দেখা যায়। পুষ্টি গুণের দিক দিয়ে দু’টিই সমান। মূলার পাতার গুণ আরো বেশি। কচি মূলার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায় এবং খুবই মজাদার। ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ও ‘সি’ তে ভরপুর।
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আর.এম.ও ডা. মো. লুৎফর রহমান জানান, মূলাতে রয়েছে খুবই কম পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলষ্টেরল। এছাড়াও এতে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
স্থানীয় মানিকগঞ্জ ভোরের সবজি আড়ত, বায়রা, গোলড়া, বরংগাইল, বাঠইমুড়িসহ বিভিন্ন আড়ত থেকে প্রতিদিন বেশ কয়েক ট্রাক মূলা যায় আশুলিয়ার বাইপাইল ও রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। রাজধানীর এসব আড়তে যে মূলা বেচাকেনা হয়, তার বেশির ভাগই যায় মানিকগঞ্জ থেকে। বিশেষ করে লাল মুলা। বাজারের রকমফেরে প্রতি কেজি লাল মুলার পাইকারি বিক্রি হয় ৮ থেকে ১২ টকায়।
মানিকগঞ্জের বারাহির চড় এলাকার কৃষক সমেজ আলী জানান, সাদা মূলার চেয়ে লাল মূলার উৎপাদন বেশি হয়। বাজারে দাম ও চাহিদাও বেশি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারী সবজী বিক্রেতা মো. তোতা মিয়া জানান, লাল মূলা দেখে অনেকেই শখ করে কিনেন। সাদা মূলার চেয়ে এর দাম একটু বেশি।
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশরাফ উজ্জামান জানান, প্রায় সব ধরনের মাটিতে মূলার চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি মূলা চাষের জন্য উত্তম। আমাদের দেশে বেশ কয়েক প্রকার মূলার জাত রয়েছে। এর মধ্যে বারি মুলা-১ (তাসাকীসান মুলা), বারি মুলা-২ (পিংকী), বারি মুলা-৩ (দ্রুতি), এভারেষ্ট এফ১-, হোয়াইট প্রিন্স এফ১, মিনো আর্লি লং হোয়াইট অন্যতম। সঠিক পরিচর্যা করলে প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ৮০-১০০ মণ মূলা উৎপাদন করা সম্ভব।