পাখিরাও মানুষের ডাকে সাড়া দেয়
সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক
তাদের আছে ভাষা, তারাও কান পেতে শোনে মানুষের কথা। বোঝে তাদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। ঠিক এমন একটা দৃশ্য দেখা মিলল সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে। একদিন শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে একজন বয়স্ক লোক একটি সাইকেল চালাচ্ছে আর বেল বাজিয়ে আয় আয় করে ডাকছে। এই আয় আয় ডাক আর বেল বাজানো দেখে অনেকে- বয়স্ক লোকটাকে পাগল বলছে। হঠাৎ আমি যেয়ে দেখি সত্যি লোকটি এমন করছে- আমিও প্রথমে মনে করেছিলাম পাগল হবে হয়তো। আবার অনেকে এর আগে এমন দৃশ্য যারা দেখছেন তারা আবার বলাবলি করছে- উনি পাখি ডাকছেন।
তাই আমি লোকটিকে জিঞ্জাসা করলাম, ‘আপনি কি ডাকেন’? লোকটি বলল, ‘পাখি ডাকি’। আমি বললাম, ‘কই আপনার পাখি?’ লোকটি বলল আছে।” উনার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে দেখি একটা টিয়া পাখি এসে বসল উনার কাঁধে। তখন উনি বলল, ‘এই হচ্ছে আমার পাখি।’
তিনি আরো বললেন, ‘এই টিয়া পাখিটি আমি প্রায় তিন বছর আগে এক হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে ছিলাম। যখন ক্রয় করে ছিলাম তখন অনেক ছোট ছিল। আমি তিন বছর ধরে নিজের সন্তানের মত মানুষ করেছি। এখন সে কথাও বলে, সে আমার সাথে প্রতিদিন ঘুরতে যায়, আমি যেখানে যাই; ও সেখানে আমার সাথে যায়, আমি বাড়ি আসার সময় সে আবার উড়ে উড়ে ফিরে আসে।” তিনি আরো বলেন, ‘শুধু টিয়া পাখি না আমার আরো একটা শালিক আছে- সেও কথা বলে এবং আরো পাঁচটি ছাগল আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার ওদের কে খুব ভালো লাগে, আমি সারাক্ষণ ওদের নিয়ে পড়ে থাকি। আর যে কয দিন বেঁচে থাকি ওদের নিয়ে সময় কাটাতে চাই।’
এমন দৃশ্য দেখে আমিসহ আর যারা ছিল সবাই অবাক। অবলা পাখি মানুষকে এতো ভালোবাসে; আর মানুষের ডাকে সাড়া দেয়। সেই বয়স্ক লোকটির নাম হাকিম আলী। বয়স প্রায় ৬৫-৭০ এর কাছাকাছি। সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বাড়ি। পেশায় ছিলেন মুদি দোকানদার। মুদি দোকানদারি বাদ দিয়েছেন ৩/৪ বছর আগে। এখন তেমন কিছু করেন না। শুধু প্রাণির প্রতি ভালোবাসা নিয়ে চলে তাঁর দিনকাল।
আজ কাল প্রাণবৈচিত্র্য ও অবলা পশুপাখির প্রতি আমরা কতই না অবহেলা করি। আমারা নির্বিচারে প্রাণবৈচিত্র্য নষ্ট করি, শিকার করে মেরে ফেলি। কিন্তু একবারও চিন্তা করিনা যে তারা আমাদের পরিবেশের কতো উপকার করে, কতো না সৌন্দর্য্য বর্ধন করে।
আমারাও পারি হাকিম আলীর মত প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করতে। পশু পাখিদের না মেরে তাদেরকে হাকিম আলীর মতন ভালোবেসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি, কারণ আমাদের উপরের নির্ভর করে বেঁচে থাকে এই প্রাণবৈচিত্র্য।