রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দাবিতে তরুণদের মানবন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান
রাজশাহী থেকে শামীউল আলীম শাওন
পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরে সড়ক, রেলপথ নিরাপদ এবং খাদ্যদ্রব্য ভেজালমুক্ত, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবিতে রাজশাহীর তরুণরা মানববন্ধন করেছে। এছাড়াও তারা একই দাবিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের, রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহাবুবর রহমান বিপিএম এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করেছে। গত রোববার (১৩ মে’১৮) রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানাধীন সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে সামাজিক সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’। মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সামজিক সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’ বিগত ২০১৫ সালের ৪ জুলাই থেকে নিরাপদ সড়ক, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদকবিরোধী প্রচারিভিযান, পরিবেশ সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে আসছে। এছাড়াও পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরে সড়ক, রেলপথ নিরাপদ এবং খাদ্যদ্রব্য ভেজালমুক্ত, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবিতে তারা প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার তারা এসব কর্মসূচি পালন করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সামাজিক সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহক ও গবেষক এবং টিভি-রেডিও ব্যক্তিত্ব ওলিউর রহমান বাবু, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক গণমাধ্যমকর্মী শামীউল আলীম শাওন, কার্যনিবাহী সদস্য যথাক্রমে সুমন হলদার, মুমতাহ্ হিনা মীম, সোলাইমান হোসেন রকি, নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, “প্রতিবছর পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজশাহীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয়; তারা মেয়াদ উত্তীর্ণ, বাসি-পচা, ফরমালিনযুক্ত খাদ্যদ্রব্যও সুযোগ বুঝে ক্রেতা-ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে। এতে করে বিপাকে পতিত হন সাধারণ জনগণ (ক্রেতা-ভোক্তা)। এমনকি ভেজালযুক্ত খাদ্যদ্রব্য খেয়ে তারা রোগাক্রান্ত হয়।”
বক্তারা আরো বলেন, “প্রতিবছর রমজান মাসে রাজশাহীর সাহেববাজার, গণকপাড়া, নিউমার্কেট, লক্ষ্মীপুরসহ শহরের বিভিন্ন বাজারের বিপণী বিতানগুলোতে ইফতার সমগ্রী ও ঈদের কেনাকাটা করতে ভীড় করে নানা বয়সী মানুষ। এটাকে কেন্দ্র করে নগরীর সাহেববাজার, গণকপাড়া, নিউমার্কেট, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন বাজারের বিপণী বিতানগুলোর সামনে ও আশেপাশের এলাকার ফুটপাত, রাস্তা অবৈধভাবে দখল করে অনেকেই বসায় দোকানপাট। অনেকেই করে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং। সবমিলিয়ে বাজারসহ আসেপাশের এলাকাগুলোর রাস্তায় সৃষ্টি হয় বাড়তি যানজট।”
এছাড়াও ঈদের আনন্দ প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ীর টানে বাড়ি ফিরে অনেক মানুষ। তাদের কেউ সড়ক, কেউ রেল পথে বাড়ি ফিরে। এতে সড়ক, রেল পথের যানবহনগুলোতে সৃষ্টি হয় বাড়তি চাপ। আর এ বাড়তি চাপ সামলাতে সড়ক, রেল পথে সংযোজন করা হয় অতিরিক্ত যানবাহন। তারপরেও যানবহনগুলোতে বহন করা হয় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী। এর ফলে যাত্রা পথে ঘটে অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা। দূর্ঘটনায় যাত্রীসহ সড়কের সাধারণ পথচারীরা গুরুত্বর আহত হয়। এমনকি তাদের অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। এতে ঈদের খুশি মুর্হুর্তের মধ্যেই দুর্ঘটনার বিষাদে পরিণত হয় বলেও জানান বক্তারা।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রদানকৃত স্মারকলিপিতে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলো হলো- ১। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপন্যের দাম বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে, ২। মেয়াদ উত্তীর্ণ, বাসি-পচা, ফরমালিনযুক্ত খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে ক্রেতা ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারতণাকারী ব্যবসায়ীদের আইনানুগ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, ৩। ফ্টুওভার ব্রিজে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বখাটেদের উৎপাত বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, ৪। পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং এবং ফুটওভার ব্রিজের ব্যবস্থা করতে হবে, ৫। ফুটপাত ও রাস্তা অবৈধভাবে দখলকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত রাখতে হবে, ৬। যানবহনগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবহকারী যানবহনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, ৭। উপরোক্ত সকল বিষয় নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে এবং মনিটরিং কাজের সঙ্গে স্থানীয় তরুণ সংগঠনগুলো সদস্যদের সম্পৃক্ত করতে হবে।