ওগো স্বর্ণলতা
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক:
গান-কবিতা ও সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বর্ণলতা একটি আলোচিত নাম। দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। অন্যের উপর নির্ভর করেই সে বেড়ে উঠে বলে স্বর্ণলতা বা আলোকলতা একটি পরজীবী উদ্ভিদ। স্বর্ণলতার বৈজ্ঞানিক নাম- Cuscuta Reflexa। গাছের বীজ ও কান্ড ঔষধি গুণে ভরা। লতার স্বাদ তেতো, কচলালে আঠালো ধরনের হয়। বসন্ত- গ্রীষ্মে পত্রহীন লতায় ছোট মঞ্জরীদন্ডে সাদা রঙের ফুল ফোটে। দেখতে অনেকটা ছোট বাতির মতো, মাথায় পাঁচ পাপড়ি, পরাগকেশর অনেকটাই অদৃশ্য। বোঁটা বেশ ছোট এবং গুচ্ছবদ্ধ। লতার তুলনায় ফুল ততটা সহজলভ্য নয়। সাধারনত চার প্রজাতির লতা দেখা যায়। পৃথিবীতে হলুদ, কমলা ও লাল রঙের ১০০ থেকে ১৭০ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়।
এ লতা নিয়ে মানুষের বিস্ময় বা কৌতূহলের শেষ নেই। হলুদ-সোনালি রঙের, নরম ও সরু। কোন পাতা নেই, লতাই এর দেহ-কান্ড-মূল সব। লতা থেকেই বংশ বিস্তার করে। সোনালী রং এর চিকন লতার মত বলে নাম হয়েছে স্বর্ণলতা। মানিকগঞ্জের প্রায় সব এলাকাতেই এটি সহজলভ্য।
উদ্ভিদ বিষয়ক জার্নাল মারফত জানা যায়, সাধারণত ছোট ও মাঝারি উচ্চতার গাছ বা বেড়ার গাছে জোঁকের মতো জড়িয়ে থাকে। আশ্রয়দাতা গাছের কান্ডে নিজের মূল কান্ড গেঁথে তার সাহায্যে খাদ্য সংগ্রহ করে। তারপর নিজের শাখা-প্রশাখায় জড়িয়ে নেয় গাছটিকে। একসময় মূল এবং কান্ড খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রে আশ্রয় দাতা গাছের মৃত্যুও ঘটিয়ে থাকে। তাই অনেকেই বাড়ির আঙিনা কিংবা বাগানের ফলবতী গাছে এটির অস্তিত্ব ঝামেলার চোখে দেখে। অনেক সময় বাধ্য হয়েই এ লতার উপদ্রুপ থেকে বাঁচার জন্য গাছের কান্ডও কেটে ফেলে।
সাধনা ঔষধালয়ের হেকিম উত্তম পালিত বলেন, “মোটা লতা পিত্তজনিত রোগে, সরু লতা দূষিত ক্ষতে, ডায়াবেটিস ও জন্ডিসে এবং বীজ কৃমি ও পেটের বায়ু নাশে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া পায়ুরোগে, পক্ষাঘাত, মাংসপেশির ব্যথা, যকৃৎ ও পিলে রোগে এর বহুল ব্যবহার লক্ষণীয়”। তাই এই ভেষজগুণে গুণান্বিত লতা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া খুবই জরুরি।