সাম্প্রতিক পোস্ট

লই’য়ের সাথে জড়িয়ে জীবন

চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু

মাছ ধরার উপকরণ ভাড়, বিত্তি, খাদুন তৈরিতে শলাকা বান (বাঁধা) দেওয়ার জন্য উপযোগি বন জঙ্গল ঝোঁপ ঝাড়ের মধ্যে বেড়ে ওঠা লতা জাতীয় গাছকে পাবনার আঞ্চলিক ভাষায় লই বলা হয়। বর্ষাকালে মাছ ধরার এসব উপকরণের চাহিদা বাড়ায় চাহিদা বাড়ে লইয়েরও। তাই তো চাটমোহর ও এর পাশর্^বর্তী এলাকার অভাবী মানুষ লইয়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল, রংপুর দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সেসব এলাকা থেকে লই সংগ্রহ করে তারা বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসেন পাবনার চাটমোহরের একমাত্র লইয়ের হাট অমৃতকুন্ডা’য়। লইগুলো ঝোঁপ ঝাড় বন বাদার বাঁশঝাড় আঁকড়ে যেমন বেঁচে থাকে তেমনি এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে চলনবিল এলাকার শত শত মানুষের জীবন।

loi-2

পাবনার চাটমোহরের ক্ষতবাড়ি গ্রামের বয়ান প্রাং এর ছেলে আফসার আলী (৫০) বলেন, “গ্রামাঞ্চলের ঝোপঝাড়ে অনাদরে অবহেলায় বেড়ে ওঠে লই। প্রায় ২০ থেকে ৩০ ফিট লম্বা হয়ে থাকে। আমরা দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ এলাকা থেকে লই সংগ্রহ করে থাকি। কিনতে হয় না। অনেকে ঝোঁপঝাড় থেকে কেটে নিতে বলে। কোন কোন সময় লইয়ের গোড়ার দিক কেটে যখন টান দেই ভিমরুল কামড়ায়।” তিনি আরও বলেন, “লইয়ের পাতা ছিড়ে ছোট ছোট বান্ডিল (আটি) করে বাঁধি। রাতে কোন রেল ষ্টশনে ঘুমিয়ে পর দিনে আবার লইয়ের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ি। বাড়ি থেকে সেতাবগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দুই তিন দিন থেকে লই কেটে শনিবারে বাড়ি ফিরে আসি। রবিবার অমৃতকুন্ডা হাটে বিক্রি করি।”

loi-3

দুই বছর যাবত লই সংগ্রহ করে বিক্রি করে আসছেন চাটমোহরের মূলগ্রাম ইউনিয়নের সুই গ্রামের ওসমান গনির ছেলে বুলবুল (৩৫)। স্থানীয় জগতলা মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। কৃষি কাজ করতেন। এখন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লই সংগ্রহ করা তার পেশা। পাবনার আতাইকুলার চরপাড়া গ্রামের আফসার মোল্লা গত রবিবার লই কিনতে এসেছিলেন অমৃতকুন্ডা হাটে। তিনি বলেন, “বাড়ির খাওয়ার মাছের জন্য প্রতিবছর কয়েকটি ভাড়, বিত্তি, খাদুন তৈরি করি।” চলনবিল এলাকার শত শত জেলে লই দিয়ে তৈরি মাছ ধরার এসকল উপকরণ কিনে তা জলাশয়ে পেতে মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

loi-4
আফসার বা বুলবুলের মতো চাটমোহরের আয়ুব, ময়দান, মমিন, হবু, রাজ্জাক, খলিল, আবুসহ আরো অনেকে এখন লই সংগ্রহের পেশায় নিয়োজিত। ছোট ছোট প্রতি আটি লই একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকায় বিক্রি হয়। কেজি হিসেবে প্রতি কেজি লইয়ের মূল্য পরে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকার মতো। ক্রেতার নিকট থেকে হাটের রাজস্ব আদায়কারীরা আটি প্রতি ৫ টাকা খাজনা আদায় করে থাকেন।

চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা এ এলাকার একমাত্র লইয়ের হাট হওয়ায় পাবনা নাটোর সিরাজগঞ্জসহ আশপাশ এলাকার মানুষ এ হাটে লই কিনতে আসেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় নিয়মনীতি উপেক্ষা করে রেল পথের উপর এ হাট বসায় প্রতি হাটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লই কেনা বেচা হয়ে থাকে। দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা, যে কোন সময় প্রাণহানীর আশংকা থাকলেও এ ব্যাপারে কেউ কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

happy wheels 2

Comments