সাম্প্রতিক পোস্ট

‘বিলাতি গাব’ গবেষণায়  সম্ভাবনার  নতুন দ্বার

‘বিলাতি গাব’ গবেষণায় সম্ভাবনার নতুন দ্বার

দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূলীয় অঞ্চল

উপকূলের স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে জন্মে থাকা গাব একটি মৌসুমী ফল। গাবে নানা জাতের মধ্যে বিলাতি গাব আকারে বড়। মাংশল বিলাতি গাব খেতে সুমিষ্ট। এ ফলের উপরি অংশ খয়েরি ভেলভেট রঙে দৃষ্টি নন্দন। দেখতে আপেলের মত গোল আকৃতির আবার কিছু গাব কিছুটা লম্বাটে। পাতলা বাকল ফেলে দিলে ভেতরে হালকা ক্রিম রঙের মাংস, কিছুটা কষযুক্ত হলেও খেতে বেশ মিষ্টি। ফলটি হালকা লোমশ ও পাতলা বাকল ছোলা আবৃত এবং গায়ে লাগলে কিছুটা চুলকায়। বিলাতি গাবের বড় বড় খয়েরি রঙের একাধিক বিচি। বিলাতি গাব  জ্যৈষ্ঠ মাসে পাকে। গ্রামাঞ্চলে অযতœ ও অবহেলায় বেড়ে ওঠে এ গাছ। এ গাছ বেশির ভাগই এক নলা ও লম্বা হয়। সাধারণত গৃহস্থবাড়ির বাগানে, সড়ক ও বেরি বাঁধের পাড়ে বিলাতি গাব গাছের দেখা মেলে। পাকা ফল মানুষ তো বটেই পাখিদেরও উপাদেয় খাবার।

বিলাতি গাব দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর উৎপাদন হয়। গাছের পাতা গাড় সবুজ কিন্তু কঁচি পাতা পিংক রঙের হয়। দেখতে আপেলের মত বলে গাবকে ‘ভেলভেট আপেল’(Velvet Apple) বলা হয়। এর ইরেজী বা স্পেনিশ ভাষায় Mabolo bv না মে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক  নাম Di ospyros Blancoi।
devdas-pic-1
বিলাতি গাবের আদি নিবাস ফিলিপাইন ও চীনে তবে বাংলাদেশসহ ভারতে এ ফল প্রচুর জন্মে। সাধারণতঃ  বীজ থেকে গাছ হয়, বাড়ির পাশে বা বাগানে অযতেœ বা কম যতেœ বেড়ে ওঠে। মার্চ-এপ্রিলে ফুল ধরে এবং জুলাই-আগস্টে ফল পাকে। পাকা ফল পল্লী এলাকা থেকে শহরে চালান দেয়া হয়। গাব গাছ দেবদারু গাছের মত সোজা উর্দ্ধমূখী, কান্ড শক্ত। উচ্চতা প্রায় ২০/২৫ ফুট। খুব শক্ত বলে গ্রামে গাব গাছ দিয়ে খুটি তৈরি করা হয়।

বিলাতি গাবের পরিকল্পিত আবাদ নেই। প্রকৃতিগতভাবেই জন্মে। তবে সম্ভাবনার কথা হচ্ছে বিলাতি গাবের গবেষণা হচ্ছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ে। ইতোমধ্যে এর দু’টি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে এখানকার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ। সফল গবেষণায় উদ্ভাবিত বিলাতি গাবের নতু দুই জাতের স্বীকৃতি দিয়েছে  কৃষি মন্ত্রণালয়। পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব রব্বানীর নেতৃত্বে এক দল গবেষক এ সম্ভাবনার কাজটি করছেন। তিনি মূলতঃ আপেল ও নাাশপতি বিষয়ে গবেষণা করেছেন। এ বিষয়ে জাপান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন।

ড. মাহবুব রব্বানী জানালেন, পটুয়াখালি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ে যোগ দিয়ে তিনি অপ্রচলিত এবং অযতেœ জন্মানো বিলাতি গাবের উপর গবেষণা শুরু করেন। তার গবেষণায় ইতোমধ্য দু’টি উন্নত জাতের উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এ দুই জাতের বিলাতি গাবের স্বীকৃতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পত্র তিনি পেয়ে পূর্ণ উদ্যমে আরো উন্নয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জাত দু’টির নাম দেয়া হয়েছে পিএসটিইউ বিলাতি গাব-১ ও পিএসটিইউ বিলাতি গাব-২। নামের শুরুতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সংক্ষেপিত রূপ (চঝঞট) নেয়া হয়েছে।
devdas-pic-2
তিনি জানান, নতুন উদ্ভাবিত বিলাতি গাবের একটি ফল বেশ বড়। অন্যটি আকারে ছোট,বাহ্যিক আকৃতি দেখতে আপেলের মত, খেতে মিষ্টি। উদ্ভাবিত নতুন গাবে কোন বিচি নাই (ঝববফ ষবংং)। এখন থেকে শুধু বীজ থেকে নয় কলম থেকে বংশবৃদ্ধি করা  সম্ভব। জোর কলম পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। নতুন গাছ হবে ছোট আকারের দাঁড়িয়ে ফল আহরণ সম্ভব। খাদ্যমান নিয়ে মানুষের ধারণা না থাকায় এ ফল মেহমানদারিতে খুব কম ব্যবহার হয়। কিন্তু বিলাতি গাবে আয়রন, ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন-বি পাওয়া যায় বলে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা জানান। নতুন জাতে খাদ্য বা পুষ্টি মানের কোন তারতম্য হবে না।

ড. মাহবুব রব্বানী আশা করছেন, আগামী বছর থেকে কৃষকদের মধ্যে এ নতুন জাতের চারা বিতরণ করা সম্ভব হবে। এর আগে সেমিনার কর্মশালা করে কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের  অবগত করানো হবে। যাতে কৃষকরা এ নতুন দুই জাতের বিলাতি গাবের আবাদ সম্প্রসারণ করতে পারে। এতে বিলাতি গাব বাণিজ্যিক প্রসারতা বাড়াবে। এজন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহায়তা নেওয়া হবে।

পাথরঘাটা কৃষি বিভাগের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল হাকিম বলেন, “বিলাতি গাব একটি অপ্রচলিত দেশী ফল। তবে এর আদর বা কদর নেই। কিন্তু পল্লী অঞ্চলের দরিদ্্রদের একটি অর্থকরি ফসল। উপকূলের স্যাঁতস্যাতে মাাটিতে জন্মে।” কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খাদ্য শস্য উইং এর সাবেক পরিচালক কৃষিবিদ জি.এম.এস আলম অপ্রচলিত এ ফসলের অর্থনৈতিক মূল্য বিবেচনায় বহুমাত্রিক ব্যবহার নিয়ে কাজ করা দরকার বলে মত দেন।

বিলুপ্ত প্রায় বিলাতি গাবের গবেষণায় দেশীয় গবেষকদের কৃতিত্বকে প্রশংসা করতে হবে। এগিয়ে নিতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে ভূমিকা নেওয়ার আহবান জানান তিনি।

happy wheels 2