বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে সফল একজন নারী জাহানারা বেগম
মানিকগঞ্জ থেকে আছিয়া আক্তার
যুগে যুগে বহু নারী আলোর দিশারী হয়ে ভূমিষ্ট হয়েছে এ ধরণীতে। তারা আলোকিত করেছেন ঘর, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রসহ পৃথিবীর সর্বত্র। যেমন-নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন। তাদেরই চলার পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন জাহানারা বেগমরাও।
জাহানারা বেগমের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের বাইমাইল গ্রামে। তার বাবার বাড়ি চারিগ্রামে । তিনি ১৯৫৭ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। স্বামী মৃত আব্দুল মুন্নাফ দেওয়ান । তিনি চার সন্তানের মাতা। তার তিন ছেলে এবং এক মেয়ে প্রত্যেকেই ভালো আছে।
জাহানারা বেগম স্কুল জীবন থেকে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে অনুসরণ করেন। তিনি নারীদের সকল কাজে মুক্তি ও তাদের অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় করেন। তিনি নারীদের নিয়ে প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি ‘দূর্বার’ নামক একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য এবং মূলত নারী পক্ষের সাথে কাজ করেন। এছাড়াও তিনি নারী ফোরামে কাজ ও বারসিক’র বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন সবসময়। প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়েও তিনি কথা বলেন এবং সমাজে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে সবসময়ই সোচ্চার থাকেন। বাল্য বিয়ে থামাতে গিয়ে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় তাকে অনেক সময়। তারপরও তিনি ক্ষান্ত হন না!
তার কাছ থেকে জানা একটি বাস্তব ঘটনা হলো: সিংগাইর পৌরসভাধীন বিনোদপুর গ্রামে একটি বাল্য বিয়ে সংক্রান্ত ঘটনা। পরিবার মেয়ের মতের বিরুদ্ধে এবং বাবা মা তাকে জোড় করে বিয়ের আয়োজন করে। তারপর মেয়েটির স্মরণ করে দুর্বারকে, বিশেষ করে জাহানারা বেগমকে। মেয়েটি নিজেই জাহনারা বেগমকে ফোন করে। জাহনারা বেগম তার কথাগুলো আমলে নেন এবং নবম শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়ের পক্ষে কাজ করতে শুরু করেন। মেয়েটি তাকে বলে, তার স্বপ্ন সে অনেক পড়াশোনা করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কথাগুলো শুনে জাহানারা বেগম কয়েকজন সচেতন মানুষকে নিয়ে মেয়েটির বাড়িতে যান। সেখানে জাহানারা বেগম মেয়েটির অভিভভাবককে বুঝান যে, মেয়েটি বয়স কম। সে পড়াশোনা করতে আগ্রহী। তাছাড়া বাল্য বিয়ে দেওয়া একটি অপরাধ। জাহানারা বেগম তাদেরকে বলেন যে, মেয়েটি একদিন অনেক বড় হবে, প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এতে সহজে ভালো ঘরের ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া যাবে।
প্রথমদিকে মেয়েটির অভিভাবক জাহানারা বেগমের কথায় কোন গুরুত্ব দেননি। বরং তাদের মেয়েটিকে শাসন করতে থাকেন। উপায় না দেখে জাহানারা বেগম স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সাহায্য নিয়ে বিয়েটি বন্ধ করেন। পরবর্তীতে এই মেয়েটি অর্নাস পাস করে চাকরিসহ অনেক ভালো পরিবারে বিয়ে করেন এবং সে এখন ভালো আছে।
এই প্রসঙ্গে জাহানারা বেগম বলেন, ‘একটা মেয়ে শুধু মেয়েই নয়, সে একাধারে কন্যা, বোন, সহধমিনী, জননী! আমরা নারীকে মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। নারীকেও সাহস করে তার সুকমার বৃত্তিগুলো প্রকাশে সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। সাংগঠনিকভাবে সৃজনশীল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে। সংসার বা পরিবারে বোঝা হিসেবে নয় সম্পদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’