আমরা গড়তে চাই সবুজ পৃথিবী

নেত্রকোণা থেকে হেপী রায়:

প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের ভূমিকা যেমন ব্যাপক তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এর গুরুত্ব কম নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জলবায়ুর বিশুদ্ধতা টিকিয়ে রাখতে একটি দেশের মোট আয়তনের অন্তত ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। গাছ আমাদের জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মানুষের জীবনে এর উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবেনা। মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীদের খাদ্যের উৎস হলো গাছ। এছাড়া মানুষের জীবন ধারণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অক্সিজেন পাই আমরা গাছ থেকেই। কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় গাছের পরিমাণ অনেক কম। আবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর পরিমাণ আরো কমছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের জ্বালানির একটা বড় অংশ গাছ থেকে আসে। আবার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে গাছ বা বৃক্ষ।

বনাঞ্চলের পরিমাণ দ্রুত ফুরিয়ে আসার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবসহ পরিবেশের ভারসাম্যতা দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। এই ক্ষতিকর অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য সকল স্তরের মানুষ বৃক্ষরোপণে এগিয়ে এসেছে। এখন বর্ষাকাল, গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। তাই গ্রামাঞ্চলের সকল শ্রেণি, পেশার মানুষ নিজেদের মতো করে গাছ লাগানো শুরু করেছেন। লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম থেকে বৃক্ষরোপণের তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যায়, এসমস্ত গ্রামে অনেকেই বৃক্ষরোপণ শুরু করেছেন। আম, লেবু, কাঁঠাল, মেহগনি, পেঁপে, পেয়ারা, জাম্বুরা, লিচু, সুপারি, কলা, নারিকেল, বেল, হরিতকি, বহেড়া, কদমসহ মোট ১৬টি জাতের ১,৮১৮টি গাছ ইতিমধ্যে রোপণ করা হয়েছে।

সব এলাকাতেই এখন আমন মৌসুমের ধানের বীজতলা তৈরি ও বীজ বপনের কাজ চলছে। তাই এখনো সেভাবে বৃক্ষরোপণ শুরু হয়নি। কৃষকদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, বীজ বপনের কাজ শেষ করেই তাঁরা বৃক্ষরোপণের কাজ শুরু করবেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বৃক্ষরোপণে উৎসাহী হয়েছে যুবরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকায় এখন তারা নিজেদের বাড়িতেই অবস্থান করছে। এ সময়ে তারা বসে না থেকে বাড়ির পতিত জায়গা, পুকুর পাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষরোপণে ব্যস্ত হয়েছে। বাইশদার গ্রামের আকাশ চন্দ্র একজন শিক্ষার্থী, সে তার বাড়িতে প্রায় ৩শ’র অধিক গাছের চারা লাগিয়েছে। বীজ থেকে মেহগনির চারা তৈরি করেছে প্রায় ২৫০টি। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী গ্রামের নার্সারী থেকে আম, পেঁপে, কাঁঠাল, হরিতকি, বহেড়া ও বেলের চারা সংগ্রহ করে লাগিয়েছে। চারা গাছের সাথে খুঁটি বেঁধে দেয়া, গাছের গোড়া পরিষ্কার করে পানি দেয়ার কাজ সে নিয়মিত করে যাচ্ছে। একই গ্রামের অর্ণব, মলয়, সজীব তারাও আকাশের মতো করে গাছ লাগাতে শুরু করেছে।

আতকাপাড়া গ্রামের কৃষক যাদের নদীর পাড়ে জায়গা আছে তারাও সেখানে ফলজ ও কাঠ জাতীয় চারা রোপণ করছেন। এছাড়া কেউ পুকুর পাড়ে, মৎস খামারের চারপাশে নিজেদের পছন্দসই গাছ লাগিয়েছেন। জয়শীদ গ্রামের রুবেল মিয়া তার বাড়ির সামনে নদীর পাড়ে প্রায় ২০০টি পেঁপে ও ১০০টি সুপারির চারা রোপণ করেছেন। সুপারির চারা নিজে তৈরি করেছে এবং পেঁপের চারা কিনে এনেছে। তবে লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামের রবিদাস পাড়ার মানুষদের আগ্রহ থাকা স্বত্তেও নিজস্ব জায়গার পরিমাণ কম বলে তারা অধিক পরিমাণে গাছ লাগাতে পারছেনা। তারপরও যার যতটুকু জায়গা আছে তাতেই লাগিয়ে রাখছেন। গদাইকান্দি গ্রামের যুবরা ফলজ গাছের চারার পাশাপাশি কাঠ জাতীয় গাছের চারা রোপণ করছেন। অনেকে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতামূলকভাবে গাছ লাগানো শুরু করেছেন।

বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা নিজ উদ্যোগেই বৃক্ষরোপণ করছেন। এতে বারসিক’র কোনো সহযোগিতা নেই। তবে বিগত সময়ে জনগোষ্ঠী পর্যায়ে বৃক্ষরোপণের পরামর্শ, প্রতিযোগিতার উপহার হিসেবে গাছের চারা বিতরণ, গাছের উপকারিতা বিষয়ে গ্রাম বা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা ইত্যাদি কাজের ফলাফল এটি। কারণ মানুষ বুঝতে পেরেছেন একটি গাছ মানুষের জন্য কত উপকারী। অনুধাবন করতে পেরেছেন এর গুরুত্ব। যে কারণে বর্ষাকালের সময়টিকে কাজে লাগিয়ে তারা বৃক্ষরোপণ শুরু করেছেন।

happy wheels 2

Comments