বরেন্দ্র এলাকায় জিরা মসলা চাষে কৃষক মো. আব্দুল হামিদের সফলতা
তানোর, রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বহড়া গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল হামিদ অনেক পরিশ্রম আর সাধনার মধ্য দিয়ে পরীক্ষামূলক জিরা চাষ সফলতা অর্জন করলেন। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেখিয়ে দিলেন বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে অনান্য ফসলের পাশাপাশি জিরা চাষও সম্ভব।
বাংলাদেশে ভৌগলিক কারণেই জিরা চাষের সম্ভাবনা কম বলে মনে করা হয়। তবে উদ্যোগী কৃষক মো. আব্দুল হামিদ এদেশে জিরা না হওয়ার চিন্তার দলে নেই। তাই তো তিনি গত বছর ১৪ ডিসেম্বর নিজের ২৫ শতাংশ জমিতে জিরা আবাদ করেন। এ জিরা চাষে পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি কিছুটা সমস্যার সন্মুখীন হলেও তার ইচ্ছাশক্তি ও উদ্যমের কাছে হার মেনে নেই অনভিজ্ঞতা। তাই নতুন ফসল চাষ পদ্ধতি না জানলেও নিজের দীর্ষ দিনের কৃষি কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি প্রতিদিন এই সদ্য রোপণ করা জিরা পরিচর্যা করেন। প্রতিনিয়ত ফসলের ক্ষেত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি দেখার চেষ্টা করেন ফসলে কোন পোকার আক্রমণ হয়েছে কিনা, সেচের প্রয়োজন আছে কিনা, কিংবা আগাছা জন্মাল কিনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “নতুন ফসল হওয়ায় আমি এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। তাই প্রতিনিয়ত জমিতে যেতাম, দেখতাম কোন ক্ষতিকর রোগ ও পোকার আক্রমণ হয়েছে কিনা। পর্যবেক্ষণ করতাম ফসল ক্ষেত। এতকিছুর পরও আমার ১৩ শতাংশ জমির জিরা বেশি সেচের কারণে নষ্ট হয়েছিলো। তবে অপর জমিতে ফসল ভালো ছিলো।”
জিরা বীজ বপনের ১০৫ দিনের মাথায় জিরাগুলো পরিপক্কতা লাভ করে বলে কৃষক মো. আব্দুল হামিদ জানান। তিনি পরিপক্ক জিরাগুলো আস্তে আস্তে সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত জিরাগুলো ২টি রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে হাত দ্বারা আস্তে আস্তে গাছ থেকে জিরাগুলো ছাড়িয়ে নেন। ১২ শতাংশ জমি থেকে ফসল সংগ্রহ করে মাড়াই ঝাড়াই সম্পূর্ণ করার পর ১৯ কেজি ৬০০ গ্রাম জিরা পাওয়া পেয়েছেন বলে জানান। ছাড়িয়ে নেওয়া জিরাগুলো আবারও ২টি রোদ দিয়ে ঠান্ডা করে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করেন যাতে পরবর্তীতে ভালো পরিমাণে আবাদ করতে পারেন।এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মাঠ থেকে যখন আমি গাছসহ জিরাগুলো বাড়িতে নিয়ে আসি তখন বাড়ির মধ্য এক ধরনের মিষ্টি গন্ধ ছড়াতে থাকে; যা যতদিন গাছগুলো আমার বাড়ির মধ্য ছিল ততদিন পর্যন্ত ছিল।” তিনি বলেন, “প্রথমবার জিরা চাষ করার ফলে আমার জমিতে পোকার আক্রমণ বেশি ছিল। তাই আমি আগামী বছর জিরা চাষে সাথী ফসল হিসাবে কালোজিরা, ধনিয়ার চাষ করব। কারণ এর গন্ধে পোকার আক্রমণ কম হয়।”
বহড়া গ্রামে জিরা মসলার চাষ প্রথম হওয়ার কারণে গ্রামের অন্য কৃষক ও আশেপাশের গ্রামের কৃষকদের মধ্যে জিরা চাষের আগহ্র সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেক কৃষকই আগামী মৌসুমে জিরা চাষের জন্য বীজ চাহিদা দিয়ে রেখেছেন।