বৃহৎ পরিসরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ
সাতক্ষীরা থেকে পার্থ সারথী পাল
“পানির আরেক নাম জীবন”। পানি ছাড়া কোন জীব ও প্রাণী চলতে পারে না। মানুষের নিত্যদিনের জীবন-জীবিকায় পানির অপরিহার্যতা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। অন্যদিকে যে অঞ্চলে পানির প্রাপ্যতা কম সে অঞ্চলের মানুষের জন্য পানি তো জীবনের চেয়েও অপরিহার্য একটি উপাদান। সাতক্ষীরা জেলার গাবুরা ইউনিয়নের কথায় ধরা যাক। লবণাক্ততার সমস্যার কারণে এই এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট রয়েছে। শুস্ক মৌসুমে তো পানির সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। সেখানকার মানুষ তখন পুকুরের পানি বিশেষ করে (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) যুক্ত পুকুরের পানি পান করে কোনরকম বেঁচে থাকে। তবে অনেকক্ষেত্রে পুকুরের পানি দূষিত হলে এসব মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না! নানান পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হন তারা।
উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরা মূলত বর্ষাকালে বৃষ্টির থেকে তাদের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করেন। অনেকে এ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করেন তাদের বছরব্যাপী সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর জন্য; যদিও এ সংরক্ষিত পানি বেশিদিন থাকে না। পানি সংরক্ষণের জন্য কলসি, প্লাস্টিকের ড্রাম, ট্যাংক, পলিথিন ইত্যাদি ব্যবহার করেন তারা। তবে বৃহৎ কোন পাত্র, টাঙ্ক বা ড্রামে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা দরিদ্র মানুষের জন্য সম্ভব হয় না বলে সংরক্ষিত পানি ফুরিয়ে গেলে এসব মানুষ আবার পুকুরের পানি থেকে তাদের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেন। এর ফলে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধি এলাকায় লেগেই থাকে তাদের।
কৃষক সংগঠনসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠীরা মনে করেন, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য যদি একটি বড় আকারের টাঙ্ক স্থাপন করা যায় এবং পুকুরগুলোতে পিএসএফ এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা এবং এগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয় তাহলে শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির সঙ্কট কিছুটা হলেও সমাধান করা যাবে। সুপেয় পানির সমস্যা সমাধানসহ বৃহৎ টাঙ্ক বা পাত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার জন্য এলাকাবাসীরা নানানভাবে ও বিভিন্ন সময়ে সরকার ও বেসরকারি সংস্থার কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি!
অবশেষে তাদের এই দাবিকে পূরণ করার জন্য এগিয়ে আসে একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই বেসরকারি সংস্থা চকবারা গ্রামের “চকবারা মানব কল্যাণ কৃষক সংগঠন”-এর সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষকদের এই দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়। কৃষক সংগঠনটির আবেদনের পরিপেক্ষিতে সম্প্রতি নিধারিত ছয় শতক জায়গার উপর ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) লিটার ধারণক্ষমতার একটি হাউজ তৈরি করা হয় যেখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য তিনটি বাড়ির চালের সঙ্গে পাইপ স্থাপন করা হয় এবং একটি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয় হাউজের পানি উত্তোলনের জন্য।
সামনের বর্ষা মৌসুমে এই পানির হাউজে পানি সংরক্ষণ করে চকবারা সংগঠনটির ১৫টি পরিবার তাদের সারাবছরের পানির সমস্যা সমাধান করতে পারবেন বলে সংগঠনের সভাপতি কৃষক আবু মোছা সরদার মনে করেন। তিনি মনে করেন, এই উদ্যোগ কৃষকসহ অন্যান্য মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করবে। তিনি বলেন, “সম্মিলিতভাবে কোন দাবি উত্থাপন করলে বা কোন উদ্যোগ নিলে একদিন না একদিন সেই দাবি বা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবেই। আমরা সবাই মিলে এ দাবি জানিয়েছি বলে আজ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য এই হাউজ তৈরি হয়েছে।”
এভাবে চকবারাসহ অন্যান্য এলাকায় বৃষ্টি পানি সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হলে উপকূলীয় এলাকার মানুষের পানি সমস্যা সমাধান হতে পারে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে!